পরশুরামে কাজে আসছে না পাউবোর রাবার ড্যাম – দৈনিক মুক্ত বাংলা
ঢাকারবিবার , ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি-ব্যবসা
  3. আইন ও আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আরও
  6. ইসলাম ও ধর্ম
  7. কোভিট-১৯
  8. ক্যারিয়ার
  9. খেলা
  10. জেলার খবর
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. বিনোদন
  13. মি‌ডিয়া
  14. মু‌ক্তিযুদ্ধ
  15. যোগা‌যোগ

পরশুরামে কাজে আসছে না পাউবোর রাবার ড্যাম

সম্পাদক
সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩ ১০:০০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

নুর আলম খান :: 

ফেনীর পরশুরামে কহুয়া নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রাবার ড্যাম কৃষকের কোনো কাজে আসছে না। ২০০৬ সালে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্যামটি নির্মাণের পর শুষ্ক মৌসুমে অন্তত চার হাজার হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আসে। কিন্তু দুই বছর পর এটি অকেজো হয়ে যায়। এর পর থেকে কৃষক ইঞ্জিনচালিত সেচ বসিয়ে পানি তুলে চাষাবাদ করলেও ফসলি জমির বড় একটি অংশ হয়ে পড়ে অনাবাদি। কৃষকের এমন দাবি অস্বীকার করে পাউবো কর্মকর্তারা বলেন, এটি এখনো সচল। তবে কৃষি বিভাগ না বলায় ড্যামটি ফোলানো হচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় পানি ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ বাড়াতে সরকার ২০০৬ সালে পরশুরাম পৌরসভার বেড়াবাড়িয়া এলাকায় কহুয়া নদীতে একটি রাবার ড্যাম স্থাপন করে। ডিপিপি প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৫৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ড্যামটি স্থাপন করা হয়। এটি স্থাপনের পর আশপাশের এলাকার অন্তত চার হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসে। ড্যামের মাধ্যমে আটকানো ১০-১৫ ফুট পানি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমেও আবাদ শুরু হয় বেড়াবাড়িয়া, সাতকুচিয়া, সলিয়া, উত্তর গুতুমা, কোলাপাড়া ও বাসপদুয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ জমিতে। চাহিদা অনুযায়ী পানি পাওয়ায় কৃষকও চাষাবাদে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। কিন্তু দুই বছর পরই ড্যামটি অকেজো হয়ে যায়। কৃষকের দাবি, শুষ্ক মৌসুমে রাবার ড্যামটি ফোলানো হয় না। তাই কহুয়া নদীতে পানি আটকানো যায় না। এ অবস্থায় আশপাশের কৃষক বেকায়দায় পড়ে ইঞ্জিনচালিত সেচ স্থাপন করে স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ করে আসছেন। এতে কমে গেছে ওই এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে চাষের জমি। শুষ্ক মৌসুমে প্রতি বছর অনাবাদি পড়ে থাকে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি।

ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাউবো কর্তৃপক্ষ কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই পরশুরামের বেড়াবাড়িয়ায় রাবার ড্যামটি নির্মাণ করেছে। ভৌগোলিকভাবেই ফুলগাজী উপজেলার তুলনায় পরশুরাম উপজেলা উঁচু। বোরো মৌসুমে পরশুরামে রাবার ড্যামটি ফোলানো হলে ফুলগাজী এলাকায় কহুয়া নদীতে পানি পাওয়া যায় না। আবার ড্যামটি ফোলানো না হলে সব পানি ফুলগাজী হয়ে ছোট ফেনী নদীতে চলে যায়। ওই সময়ে পরশুরামের কৃষক নদীতে পানি পান না। তাই রাবার ড্যামটি ফোলালেও সমস্যা, না ফোলালেও সমস্যা। এ কারণে পাউবো ড্যামটি বছরের পর বছর ফোলাচ্ছে না। এ অবস্থায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যামটি কৃষকের কোনো কাজে আসছে না।

কৃষক আশরাফ হোসেন বলেন, ‘রাবার ড্যামটি নির্মাণ করা হয়েছে ২০০৬ সালে। নির্মাণের দুই বছর পর থেকে এটি আর ফোলানো হয় না। তাই পানিও আটকানো যাচ্ছে না। বোরো মৌসুমে পানি সংকটে সব জমি চাষাবাদের আওতায় আনা যাচ্ছে না। কয়েকজন কৃষক ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইঞ্জিনচালিত সেচ বসিয়ে স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ করলেও বিস্তীর্ণ এলাকা অনাবাদি পড়ে থাকে। আমরা রাবার ড্যামের বিষয়ে স্থায়ী সমাধান চাই। আমরা কোনো জমিই অনাবাদি রাখতে চাই না।’

স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন জানান, বোরো মৌসুম ও চৈত্রের খরার সময় বেড়াবাড়িয়ায় রাবার ড্যামটি কার্যকর থাকাকালে হাজার হাজার হেক্টর জমি আবাদ করা হতো। তবে বেড়াবাড়িয়ায় রাবার ড্যামের মাধ্যমে পানি আটকানো হলে ফুলগাজীর বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি পাওয়া যেত না। এতে ফুলগাজী উপজেলার কৃষকের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিত। আবার পরশুরামে পানি আটকানো না হলে ফুলগাজী হয়ে সব পানি ছোট ফেনী নদীতে নেমে যায়। রাবার ড্যামটি ফুলগাজীর নিলক্ষী এলাকায় স্থাপন করা হলে ফুলগাজীতেও পানি থাকত, পরশুরামের কৃষকরাও পানি পেতেন। শুষ্ক মৌসুমে পানি নিয়ে কারো চিন্তার কারণ থাকত না।’ তিনি আবাদি জমি ও উৎপাদন বাড়াতে ফুলগাজীর নিলক্ষী এলাকায় দ্রুত একটি রাবার ড্যাম স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাবার ড্যামটির তত্ত্বাবধায়ক ছাবু মিয়া জানান, রাবার ড্যাম সচল আছে। ওপরে কাভার ফেটে গেলেও ভেতরে টায়ার ঠিকমতো রয়েছে। রাবারে কোনো সমস্যা নেই। ভারতের উজানের পানি দুই নদীতে আসে। বেড়াবাড়িয়া রাবার ফোলালে পানি মুহুরী নদীর দিকে চলে যায়। এজন্য রাবার ফোলানো হয় না। মুহুরী নদীর কাছে আরেকটি রাবারের বাঁধ হলে পরশুরাম এলাকার পানি স্থির থাকবে।

পরশুরাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘কহুয়া নদীর পানির ওপর নির্ভর পরশুরাম পৌরসভা ও বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের ১ হাজার ১০০ কৃষক। বোরো মৌসুমে এটি ফোলানো হলে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা যাবে। বছরের পর বছর এটি ফোলানো না হওয়ায় অনেক কৃষক পানির অভাবে জমি আবাদ থেকে বিরত রয়েছেন। আগামী বোরো মৌসুমে রাবার ড্যামটি ফোলানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা মাসিক সভায় প্রস্তাব রাখা হবে। এটি ফোলানো হলে পরশুরাম এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে আবাদ বাড়বে।’

পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান ভুঁঞা বলেন, ‘পরশুরামে স্থাপিত রাবার ড্যামটি সচল আছে। তবে এটি ফোলালে পরশুরামের কৃষক খুশি হলেও ফুলগাজী অংশের কৃষক পানি না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। যার কারণে এটি ফোলানো হয় না। তবে কৃষি বিভাগ এটি ফোলানোর জন্য বললে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।’

ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরিন আখতার বলেন, ‘ফুলগাজী-পরশুরামের কৃষকের সমস্যার কথা আমি জানতে পেরেছি। এরই মধ্যে চাষাবাদ বাড়ানোর লক্ষ্যে ফুলগাজী উপজেলার ধর্মপুর এলাকায় আরেকটি রাবার ড্যাম নির্মাণের জন্য ডিও লেটার দিয়েছি। আশা করি শিগগিরই মন্ত্রণালয় এটি অনুমোদন দেবে। প্রস্তাব অনুযায়ী রাবার ড্যাম তৈরি হলে কৃষকের আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।