নিমকি হোসেন ::
২০০৯ সালে পাখির সাথে ধাক্কা লেগে বিমানের দুটো ইঞ্জিনে আগুন লেগে গেলে সেই বিমানকে হাডসন নদীতে জরুরী অবতরণ করান পাইলট। আমেরিকার পাইলট চেসলি সালেনবার্গার এই অসাধ্য সাধন করেছিলেন, যেখানে কোনো যাত্রীই আহত পর্যন্ত হননি। শুধু সামান্য ছড়ে গিয়েছিল ক’জনের চামড়া!
এই পাইলটের অসাধারণ এই কাজ নিয়ে ৬০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে মুভি বানিয়ে প্রযোজক আয় করেন ২৪০ মিলিয়ন ডলার!
বাংলাদেশের একজন পাইলট, ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। ওমানের মাস্কাট থেকে বিমান নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করার পরপরই টের পেলেন কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে। একটু পরে জানতে পারলেন বিমানের ল্যান্ডিং-এর একটা টায়ার ফেটে গেছে!
এভাবেই তিনি বাংলাদেশে এলেন। ঢাকা বিমানবন্দরে ল্যান্ডও করলেন দৃঢ়তা আর সাহসিকতার সাথে। আরেকটা টায়ারও ফেটে গেল। চাকাও খানিকটা দুমড়েমুচড়ে গেলো! ঝাকি খেতে খেতে বিমান থেমে গেলো একসময়। বেচে গেলো ১৫০ জন যাত্রী!
না, এটা নিয়ে কোন মুভি হয়নি। বাংলাদেশ বিমান চলাচল কতৃপক্ষের থেকে কোন স্বীকৃতিও জোটেনি!
স্বীকৃতি অবশ্য পেয়েছিলেন তিনি। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন, যার সদর দপ্তর কানাডার মন্ট্রিলে, তাকে সনদ দিয়েছেন, পুরষ্কৃত করেছেন তার এই অসাধারণ কাজের জন্য।
নওশাদ আতাউল নামের বাংলাদেশি এই ভদ্রলোক আজ মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুর আগমুহূর্তেও করেছেন তিনি অনন্যসাধারণ আরেকটি কাজ।
গত শুক্রবারে ওমান থেকে বিমান চালিয়ে আসছিলেন দেশের উদ্দেশ্যে। বিমান যখন ভারতের আকাশসীমায়, তখন তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন! সেই অবস্থাতেই কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করে নাগপুর এয়ারপোর্টে বিমান অবতরণের ব্যবস্থা করেন। আরো একবার তিনি তার সকল যাত্রীকে নিরাপদে পৌঁছে দেন কোনো হতাহত ছাড়াই!
কিন্তু তিনি নিজে বাঁচতে পারেননি। বাঁচবেন কিভাবে? যখন তার শরীরের কোষগুলো রক্ত আর অক্সিজেনের অভাবে হাহাকার করছিল, তিনি তখন হাহাকার করছিলেন বিমানের ১২২ জন মানুষের প্রাণের কথা ভেবে!
নাগপুরে হাসপাতালে সকল প্রকার চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ৪৪ বছর বয়সী এই বাঙ্গালি সুপারম্যান আজ চলে গেলেন সব কিছুর ঊর্ধ্বে!
আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন।
তথ্য : ফেসবুকের ২৮ আগষ্ট ২০২১