নিজস্ব প্রতিবেদক::
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন বাতিল হয়ে যাওয়া পিপলস ব্যাংক প্রতিষ্ঠার শুরুতেই দুর্নীতির পরিকল্পনা করেছিলেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ও তার লটেরা চক্র। ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য যে অর্থ ও সম্পদের প্রয়োজন সেগুলো তার ছিল না। ব্যাংকের মূলধনের জোগান দেওয়ার মতো আর্থিকভাবে সক্ষম কোনো উদ্যোক্তার আশ্বাসও পাননি তিনি। শুধু সরকারের একজন নীতিনির্ধারকের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় তার সঙ্গে গড়ে ওঠা সখ্যের কারণে আবুল কাশেম ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন। ওই সময়ে তিনি দেশে এসে ব্যাংকের পরিচালক করার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেগুলো নিজে আত্মসাৎ করেছেন। তার সঙ্গীরা হাজরে কোটি টাকা তুললেও তা আত্নসাত করে ব্যাংকের হিসাবে জমা করেননি। ফলে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও দুই বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত পালনে ব্যর্থ হওয়ায় ও ব্যাংক প্রতিষ্ঠার নামে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন বাতিল করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দুর্নীতির দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়। ওই মামলায় এখন তিনি গ্রেফতার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আবুল কাশেম ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করে শুরুতেই দুর্নীতি করেছেন। টাকার অঙ্কে তার দুর্নীতি অর্ধসহস্রাধিক কোটি টাকা হবে। কিন্তু ব্যাংকের কোনো কোনো পরিচালক কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তারা সমাজে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশীর্বাদ নিয়ে একটি ব্যাংক থেকেই ৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাদের ধরছে না কেউ। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে ব্যাংক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদেরও ধরা জরুরি।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, পিপলস ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তারা শর্ত পালন করতে না পারায় ওই অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে। এখন পিপলস ব্যাংক নামে কোনো আবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নেই। এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার জন্য যারা মূলধনের জোগান দিয়েছেন সেটি তারা নিজেরা আলোচনা করে সমাধান করবেন বা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।
জানা গেছে, আবুল কাসেম ছিলেন আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সহসভাপতি। সেখানেই তিনি ব্যবসা করতেন। সরকারের একজন নীতিনির্ধারকের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় আবুল কাসেম তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সেই সুবাদে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি বাংলাদেশে এসে একটি ব্যাংক স্থাপনের আশ্বাস পান। ২০১৭ সালে তিনি দেশে আসেন। দেশে এসেই পিপলস ব্যাংক নামে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক স্থাপনের কাজ শুরু করেন। অনুমোদন পাওয়ার আগেই রাজধানীর বনানী ডিওএইচএসে ‘প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক লিমিটেড’ নামে সাইনবোর্ড ব্যবহার করে কার্যালয়ও খোলেন। এরপর ব্যাংকের পরিচালক বানানোর আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ শুরু করেন। এভাবে প্রায় দুই বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পিপলস ব্যাংকসহ তিনটি ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন দেয়। প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন আবুল কাশেম। ওই অনুমোদনের পর বাকি দুটি ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করলেও পিপলস ব্যাংক শর্ত পালন করতে পারেনি। ফলে তিন বছর পর গত বছরের ২১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ ব্যাংকটির নীতিগত অনুমোদন বাতিল করে দেয়। তারা শর্ত পালনের জন্য সময় চাইলে সে আবেদনও বাতিল করে দেওয়া হয়।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের আগেই প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের পরিচালক করার নামে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ শুরু করে। সেগুলো আর ফেরত দেননি আবুল কাশেম। সেই টাকা তিনি ব্যাংকের হিসাবেও জমা করেননি। ওই টাকায় তিনি গুলশানে ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন ও দামি গাড়ি কিনেছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
জানা গেছে, নতুন ব্যাংক করতে তখন ৪০০ কোটি টাকার নগদ মূলধন লাগত। কিন্তু তিনি এর চেয়ে বেশি অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়েছেন। সেগুলো ব্যাংকের মূলধন জোগান না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন। ফলে ব্যাংক আর প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে জাপান-বাংলা ব্যাংক নামে আরও একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথা বলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে প্রতারণা করেছিলেন এক ব্যক্তি। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ করা হয়।
![]() |
![]() |
|||
![]() |
![]() |
![]() |
||
![]() |
![]() |
|||
![]() |
|
![]() |