নিজস্ব প্রতিবেদক :: রাজধানী ঢাকায় অনুমোদন ছাড়া হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে শিশু মাইশার।
হাতের আঙুলে অস্ত্রোপচারের সময় মারা যাওয়া কুড়িগ্রামের ছয় বছর বয়সী শিশু মারুফা জাহান মাইশাকে ঢাকার যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এটি সেই হাসপাতাল! আশ্চর্য়্যজনক হলো এই হাসপাতাল অনুমোদন ছাড়াই চলছিল।
মাইশার মৃত্যুর পর থেকে রাজধানীর রূপনগরের আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালটির সব কার্যক্রম বন্ধ। মাইশাকে ওই হাসপাতালে পাঠানো এবং অস্ত্রোপচার নিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বক্তব্যে রয়েছে অস্পষ্টতা। তারাসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মাইশার বাবা।
একটি ৯ তলা ভবনের ওপরের দিকে চারটি ফ্লোরে কয়েক মাস ধরে চলছিল আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের কার্যক্রম। সম্প্রতি এর মালিকানা কিনে নেন জিকরুল্লাহ স্বপন। স্বপনের দাবি, তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা।
আগের মালিক ডা. সৈয়দ মাসুদ রহমান একসময়ে মিরপুরে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালাতেন। তবে ঘটনার পর থেকে তার ফোন বন্ধ। তার চিকিৎসা-সংক্রান্ত অনুমোদন আছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভেলাকোপা ব্যাপারী পাড়ার মোজাফফর আলী ও বেলি আক্তারের মেয়ে মাইশা। তার ডান হাতের আঙুল ৯ মাস বয়সে পুড়ে বাঁকা হয়ে যায়।
মোজাফফর হোসেন মেয়ের চিকিৎসার জন্য গত ২৮ নভেম্বর মিরপুর ১১-এর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে আসেন। ওই হাসপাতালে রোগী দেখেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি) ডা. আহসান হাবীব। মাইশাকে তার কাছেই দেখানো হয়।
মোজাফফর হোসেনের অভিযোগ, ডা. আহসান হাবীব মাইশার হাতে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। পরদিন অভিভাবকেরা সম্মতি দিলে ডা. হাবীব তাদের জানান, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা লাগবে। আর রূপনগর আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে খরচ হবে ৭০ হাজার টাকা।
আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিজের শেয়ার থাকায় কম খরচে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করতে পারবেন বলেও জানান ডা. হাবীব।
স্বজনদের দাবি, ৩০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে মাইশার অস্ত্রোপচার শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডা. হাবীব অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে জানান অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। হাতের আঙুলে প্রতিস্থাপনের জন্য চামড়া নেয়া হয়েছে মাইশার পেট থেকে।
তবে বেলা দেড়টার দিকে ডা. হাবীব স্বজনদের জানান মাইশার জ্ঞান ফিরছে না। তাকে অন্য হাসপাতালের আইসিইউতে পাঠাতে হবে। তিনি নিজেই অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে একজন নার্স, ওয়ার্ড বয়সহ মিরপুর মাজার রোডের গ্লোবাল স্পেশালাইজড হসপিটালে নিয়ে যান। তবে সেখানকার চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান মাইশা আগেই মারা গেছে।
এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে রাজধানীর রূপনগর থানায় অভিযোগ জমা দেন মাইশার বাবা। সন্ধ্যায় সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে পুলিশ।
অভিযোগে মাইশার বাবা বলেন, মাইশার মৃত্যুর পর ডা. হাবীব তড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সেই সঙ্গে অস্ত্রোপচারের আগাম ফি হিসেবে জমা দেয়া ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়, মরদেহ দাফনের আগে গোসলের সময় দেখা যায় মাইশার নাভির নিচে আড়াআড়িভাবে পুরো পেট কাটা এবং সেখানে ১৭টি সেলাই রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্বজনরা ডা. হাবীবকে ফোন করলে তিনি তখন জানান, অস্ত্রোপচার তিনি করেননি, সেটি করেছেন ডা. শরিফুল ইসলাম ও ডা. রনি।
এরপরেই আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের অবস্থান যেখানে সেই রূপনগর থানায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় মাইশার পরিবার। তাদের অভিযোগ, মাইশাকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে।

পার্টি সেন্টারের স্টেজের ওপরেই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার
রূপনগরের আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় একটি ৯ তলা ভবনের ওপরের দিকের চারটি ফ্লোরে এর অবস্থান।
ভবনের নিচতলায় খাবার হোটেলসহ তিনটি দোকান রয়েছে। এরপর দুই, তিন ও চারতলায় পার্টি সেন্টার। চতুর্থ তলার পার্টি সেন্টারে গান-বাজনার স্টেজের ঠিক ওপরেই পঞ্চম তলায় হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার। সেখানেই মাইশার দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়।
ভবনের ষষ্ঠ তলায় আল-আরাফাহ ইসলামী জীবনবিমার অফিস। এর পরের সপ্তম তলায় হাসপাতালের ওয়ার্ড, অষ্টম তলায় কেবিন ও নবম তলায় কনসালটেশন সেন্টার।
মাইশার মৃত্যুর পর থেকে অনুমোদনহীন এই হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চারটি ফ্লোরই সোমবার সকালে তালাবন্ধ দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালটি চালু ছিল, রোগীও ভর্তি ছিলেন। তবে এরপর থেকে কোনো কার্যক্রম নেই।
ভবনের অন্য প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ৩০ নভেম্বর মাইশার মৃত্যুর পর হাসপাতালের দায়িত্ব আগের মালিকের কাছ থেকে বুঝে নিয়েছেন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা জিকরুল্লাহ স্বপন।
অবৈধ হাসপাতালের নতুন মালিক
মাইশার অস্ত্রোপচার হয়েছে যেখানে সেই আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের কোনো অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিল্লাল হোসেন এবিসি টিভিকে বলেন, ‘আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের কোনো নিবন্ধন নেই এবং এ জন্য তারা আবেদনও করেনি। ওই শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি জানার পরই আমরা কালক্ষেপণ না করে পরিচালকের নির্দেশে সেখানে যাই এবং হাসপাতালটি বন্ধ করে দিই।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে গিয়ে দেখি সব কক্ষ তালা দেয়া। শুধু ফজলুল রহমান রাব্বি নামে একজনকে পাওয়া যায়। তিনি আমাদের পরিচালকের স্বাক্ষরিত নোটিশটি রিসিভ করেন।
‘নোটিশে নির্দেশনা দেয়া হয় কোনো চিকিৎসক যেকোনো হাসপাতালে কাজ করতে গেলে আগে দেখে নেবেন সেটি নিবন্ধিত কিনা। যদি না থাকে তবে তিনি কাজ করতে পারবেন না। করলে দায়ভার তাকেই নিতে হবে।’

অনুমোদন ছাড়াই ঢাকার বুকে এভাবে একটি হাসপাতাল কীভাবে চলল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। তবে আমাদের লোকবল কম। অলিগলিতে গিয়ে সব তো দেখা সম্ভব হয় না। অভিযানে যেগুলো অনিবন্ধিত নজরে আসে, সেগুলো বন্ধ করা হয়।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলম মেমোরিয়াল হাসপাতাল গড়ে তোলেন ডা. সৈয়দ মাসুদ রহমান নামে এক ব্যক্তি। ৯ তলা ভবনটির মালিকানাও তার। আগে তিনি মিরপুরে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ছিলেন। ৩০ নভেম্বরের পর হাসপাতালটির মালিকানায় পরিবর্তন এসেছে, এখন এটির মালিক জিকরুল্লাহ স্বপন।
স্বপন এবিসি টিভি ও মুক্ত বাংলাকে বলেন, ‘আমি নিজে একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এবং মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। বর্তমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সহসম্পাদক।
‘এই হাসপাতালের আগের মালিক ছিলেন ডা. সৈয়দ মাসুদ রহমান। প্রায় চার মাস ধরে হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে। আমার কাছে মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে ডিসেম্বরের ১ তারিখ।’
ডা. সৈয়দ মাসুদ রহমানের সঙ্গে পরিচয় কীভাবে জানতে চাইলে স্বপন বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার দেখা হয় মিরপুর মেডিট্যাগ অথবা মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এখন নামটা সঠিক মনে নেই।’
হাসপাতালের আগের মালিক এখন কোথায় আছেন সে ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের কেউ তথ্য দিতে পারেননি। তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
ডা. মাসুদের বিষয়ে জানতে চাইলে জিকরুল্লাহ স্বপন বলেন, ‘তিনি আগে মিরপুর ১২-তে মিম জেনারেল হাসপাতালে বসতেন। পরে নিজেই মিরপুরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার দিয়ে সেখানে বসতেন। সবশেষে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে কাজ শুরু করেন এ বছরের জুলাই-আগস্ট থেকে।
‘আমি ওনার কোনো কাগজপত্র দেখিনি। যতটুকু জানি উনি এমবিবিএস ডাক্তার এবং রাশিয়া থেকে এমডি ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। এটা তো অনেক বড় ডিগ্রি।’
অনুমোদনহীন একটি হাসপাতাল কেন কিনলেন, এমন প্রশ্নে আগের বক্তব্য থেকে সরে আসেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন। এবার তিনি দাবি করেন, প্রতিষ্ঠান কেনেননি, ভাড়া নিয়েছেন।
স্বপন আরো বলেন, ‘আমি হাসপাতাল কিনিনি। শুধু হাসপাতালের মালামাল কিনেছি। এটার অনুমোদন পেতে তিন-চার মাস ধরে আলোচনাও হচ্ছে। আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবশ্য জানিয়েছে এ ধরনের কোনো আবেদন তারা পায়নি।
জিকরুল্লাহ স্বপন নিজেকে মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সহসম্পাদক দাবি করলেও সংগঠনের নেতারা তা অস্বীকার করছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক এবং মঙ্গলবারের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী জাকওয়ান হোসাইন এবিসি টিভি কে বলেন, ‘জিকরুল্লাহ স্বপন নামে কাউকে আমি চিনতে পারছি না। সহসম্পাদক পদে অনেককেই চিঠি দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ হলেও হতে পারে, তবে আমি তাকে চিনতে পারছি না।’
মিরপুরে ছাত্রলীগের সবশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ২০ বছর আগে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেড় বছর আগে একটি কমিটি ঘোষণা করা হলেও সেখানে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ছিল। আর এবারের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সামনে রেখে ১ ডিসেম্বর আরেকটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে সেখানেও শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম রয়েছে।’
আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের চারটি ফ্লোর ঘুরে কেবল ফজলুর রহমান রাব্বি নামে প্রতিষ্ঠানের এক কর্মীর দেখে মেলে।
মার্কেটিংয়ের কর্মী দাবি করা রাব্বি এবিসি টিভি ও মুক্ত বাংলাকে বলেন, ‘চলতি মাসের ১ তারিখ স্বপন ভাই এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছেন। এখানে যে অকারেন্সটা হয়েছে সেটা গত মাসের ৩০ তারিখে। আমি যতটুকু শুনেছি মাইশার আঙুলের অপারেশন ছিল। এসব ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় ডাক্তাররা চামড়া নেয় রান (ঊরু) থেকে। তার রান চিকন হওয়ায় সেখান থেকে চামড়া নিতে পারেনি। পরে পেট থেকে চামড়া নিয়ে অ্যাডজাস্ট করেছে।’

হাসপাতালে এখন কোন রোগী ভর্তি আছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন কোনো রোগী নাই। হাসপাতাল ফাঁকা। আমাদের হাসপাতালের কিছু কাজ বাকি আছে। এগুলো শেষ করে রোগী ভর্তি নেব।’
আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের পাশের সুজন পেইন্ট অ্যান্ড স্যানিটারি দোকানের কর্মচারী মো. ফয়সাল বলেন, ‘এই হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে পাঁচ-ছয় মাসের বেশি সময় ধরে। রোগী আসা-যাওয়া দেখেছি। এখন শুনলাম হাসপাতাল নাকি বন্ধ।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের পাশের একটি ভবনের কেয়ারটেকার বলেন, ‘পাঁচ-ছয় মাস ধরে এই হাসপাতাল চালু আছে। সিজারসহ বিভিন্ন ধরনের অপারেশন হতো। যখন রোগী আসত তখন ডাক্তার আসত। ডা. মাসুদ এই হাসপাতালে নিয়মিত ৯ তলায় বসতেন। তিনি মেডিসিনের ডাক্তার। মাসুদ হাসপাতাল এবং এই ভবনের মালিক।’
তিনি বলেন, ‘ডা. মাসুদের বোন হাসপাতালের পাশের সাততলা ভবনের মালিক। তারা কেউ এখানে পরিবার নিয়ে থাকেন না। পল্লবীর বাসায় থাকেন। ডা. মাসুদ প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে ২টা এবং আবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নিয়মিত আসতেন।’
দায় নিচ্ছেন না চিকিৎসকেরা
মাইশাকে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে পাঠানো চিকিৎসক ডা. আহসান হাবীব দাবি করছেন হাসপাতালের শেয়ার হোল্ডার তিনি নন। শিশু মাইশার মৃত্যুর ঘটনাটি ‘দুঃখজনক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন এর কারণ বুঝতে পারছেন না।
ডা. হাবীব এবিসি টিভি ও মুক্ত বাংলাকে বলেন, ‘মেয়েটির হাতের চামড়া ঠিক করতেই পেট থেকে চামড়া নেয়া হয়। সেখানে ডা. শরিফুল ইসলাম অপারেশন করেন। পুরো সময়টা আমি ছিলাম তাদের সঙ্গে।’
মাইশার পরিবারকে তিনি ওই হাসপাতালের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে থাকার কোনো তথ্য দেননি দাবি করে ডা. হাবীব বলেন, ‘এগুলো বানোয়াট। আমি, ডা. শরিফুল ইসলাম এবং এনেস্থিসিয়া স্পেশালিস্ট রনি অপারেশনের সময় ছিলেন। সেখানে মেয়ের হাতের ছবি তোলা হয়েছে। সিসিটিভি আছে, পুরোটা দেখা যাবে। আর আমি কোনো শেয়ারহোল্ডার না।’
সিসিটিভি ফুটেজ চাইলে অবশ্য তিনি দিতে রাজি হননি।
অনুমোদনহীন একটি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনুমোদনের ব্যাপারটি প্রক্রিয়াধীন ছিল। আমরা সার্জন। বিভিন্ন জায়গায় সার্জারি করি। এটা প্লাস্টিক সার্জারি ছিল, তাই ডা. শরিফুলকে রেফার করেছিলাম।’
মাইশার অস্ত্রোপচার করেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলাম।
অনুমোদনহীন আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত থাকা নিয়ে প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি এবিসি টিভি ও মুক্ত বাংলাকে বলেন, ‘অনুমোদন আছে কি না, এটা তো আমি জানি না। আহসান হাবীব জানেন।’
মাইশার মৃত্যুর জন্য অ্যানেস্থেশিওলজিটদের দায় দিচ্ছেন ডা. শরিফুল।
তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক সার্জারিতে আমাদের মেইন কাজ হচ্ছে তলপেট থেকে অথবা থাই থেকে স্কিন নিয়ে আরেক জায়গায় দিই। তবে হাত পুড়ে গেলে সেখানে থাইয়ের স্কিন দেয়া যায় না। কারণ, থাইয়ের স্কিনের পুরুত্ব বেশি। ভালো রেজাল্টের জন্য স্কিন পেট থেকে নেয়া হয়।’
মাইশা কেন মারা গেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা এনেস্থেশিয়া যিনি দিয়েছেন তিনি ভালো বলতে পারবেন। আমি অপারেশন শেষ করতে পারিনি। এনেস্থেশিয়ায় প্রব্লেম হয়েছিল। তখন তাড়াতাড়ি ডা. আহসান হাবীব আসেন। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন থেকে একজন এনেস্থেশিয়া স্পেশালিস্ট আসছিলেন তখন। তার নামটা মনে নেই। হাবীব ভাই ভালো বলতে পারবেন। তিনি তাকে নিয়ে এসেছিলেন। দুঃখজনক হচ্ছে রোগীকে বাঁচানো যায়নি।’
আইসিইউ হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যায় মাইশা
আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর মাইশাকে মিরপুর-১ মাজার রোডের গ্লোবাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে পাঠানোর আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়।
গ্লোবাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে নির্বাহী পরিচালক এম এম নেয়ামত উল্লাহ এবিসি টিভি ও মুক্ত বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে তো রোগীকে ভর্তিই করিনি। হাসপাতালে ঢুকতে দেয়া হয়নি। কারণ মাইশাকে আমরা অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই মৃত পেয়েছি।
‘তাদের সঙ্গে দুইজন ডাক্তার ও ওটির লোক এসেছিলেন। তারা আমাকে নানাভাবে অনুরোধ করে চেষ্টা করেছেন ম্যানেজ করে রোগীকে আইসিউতে ঢোকানোর জন্য। কিন্তু একজন মরা বাচ্চাকে কেন আমরা আইসিউতে ঢোকাব?’
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহাবিলিয়েশন হসপিটালের শল্যবিদ আওলাদ হোসেন এবিসি টিভি ও মুক্ত বাংলাকে বলেন, ‘শরীরের কোনো অংশ থেকে অন্য অংশে চামড়া কেটে লাগানোকে বলে স্কিন গ্রাফটিং। এটি সাধারণত ঊরু বা থাই থেকে নেয়া হয়। তবে ঊরু চিকন হলে পেটের ওপরের অংশ বা হাতের শোল্ডার থেকে নেয়া যায়। এই সেলাই চামড়ার ওপরেই থাকে। চিকিৎসক মনে করলে যেকোনো সুবিধাজনক জায়গা থেকেই চামড়া নিতে পারেন।’
পাঁচ দিনের মাথায় মামলা
মায়েশাকে হত্যা করার অভিযোগ তুলে সোমবার ঢাকার রূপনগর থানায় মামলা করেছেন তার বাবা মোজাফফর হোসেন।
রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল রহমান সরদার এবিসি টিভি ও মুক্ত বাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মাইশার মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবার আমাদের থানায় মামলা করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার জসীম উদ্দীন মোল্লা এবিসি টিভি ও মুক্ত বাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে যা যা করণীয় সব ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি।