আরিফ হোসেন টেলিভিশন সাংবাদিকতার পথিকৃত সকাল তার শুরু হয় জয় আর বাংলার সঙ্গে খুনসুটি কেটে।
জয় আর বাংলা বাবার সাথে একাট্রা এক আত্না শরীর গুলো আলাদা। ঘুম ভাঙ্গলেই ডিভাইসের সাথে তাদের সম্পর্ক শুরু। গেম কিংবা কার্টুন বিসারদ হলেন তারা। সকালে বাবাকে পেলেই হলো তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আর বাবা আরিফ হোসেন বলে উঠবেন ‘আজ আমাকে কোন পত্রিকা পড়ে শোনাবে ?
জয়ের উত্তর নিউইয়র্ক টাইমস হলেই ভালো হয় বাবা বাংলা পত্রিকা নয় ?’ মানে জয় এর বাংলা পড়ায় ভীতি আছে। প্রতিদিন যদি অফিসের তাড়া না থাকে তাহলে ওই সময় বাবার পত্রিকা পাঠ করার প্রস্তাবের এই উত্তর দেয় জয় বাবাকে।
বাবা আরিফ হোসেন জানিয়ে দেন তাঁর পছন্দ। তারপর শুরু হয় পত্রিকা পাঠ পর্ব বাংলাও যোগ দেন সেখানে। নিজেদের টেলিভিশন এবিসির কার্যক্রম একটু ছোট করে ফেলায় এখন সেখানে আর খুব একটা যাওয়া পরে না জয় আর বাংলার।
তাই ছোটদের খবর পড়াও বন্ধ। বাবার সাথে শুরু সকাল। স্কুল খোলা থাকবে বাবার সাথে স্কুলে যেতে চাই তারা। তবে শর্ত গাড়ি চালাতে হবে বাবাকে।
ব্যস এভাবে দিনের শুরু হয় আরিফ হোসেনের।
সাধারণত প্রানজ্বল হাসিখুশি মানুষ আরিফ হোসেন। সারাক্ষন মুখে হাসি লেগেই থাকে। মনমেজাজ হয়তো কোনো কারণে ঠিক নেই, বাংলা তখন বাবার প্রিয় নচিকেতার গান কিংবা তার স্বরচিত গান বাজিয়ে দেয়। আর জয়ের তখন সরল উক্তি এটা কোন গান হলো ?
সে তখন কোন ইংরেজি গান ইউটিউবে বের করে প্লে করে দিলো।
আরিফ হোসেনের সাংবাদিকতার পেশা আর আশ পাশের মানুষের কারণে একা থাকার সময় কোথায়?
পড়ালেখার সুবাদে নিজে একেতো প্রযুক্তিবিদ তার ওপর তিনি প্রযুক্তিপ্রেমী সেই ছেলে বেলা থেকেই।
আমেরিকা থেকে বড় ভাই , ভার্জিনিয়া থেকে ছোট বোন, লন্ডন থেকে ছোট চাচা, চাচী-চাচাতো বোন, অষ্টেলিয়া থেকে মেঝ ভাই আর গ্রীস থেকে ছোট আপুনির কাছ থেকে উপহার পাওয়া সামগ্রী আর তার মেধায় সংগ্রহ করা ডিভাইস আর নানা ধরনের প্রযুক্তির উপহার সামগ্রী জীবন টাকে অনেক উপভোগ্য ও অনেক কিছু সহজ করে দেয়। শুধু আদেশ করার জন্যই অপেক্ষা, সঙ্গে সঙ্গে তা পালন করে জয় আর বাংলা। আর তাদের কাছে ল্যাপটপ, ট্যাব আর মুঠোফোন তো আছেই। ওদের ক্লাসের পড়া কিংবা কাটুন ছবি সাথে গেমস ছাড়াও পিএইচডি থিসিসের সব বই থেকে শুরু করে গল্পের বওে থাকে অনলাইনে। যখন যা ইচ্ছা, পড়ে নেয় জয় আর বাংলা। বাবাকেও পড়ে শোনায় তারা। প্রতিটি দিনই কর্মব্যস্ত থাকেন আরিফ হোসেন।
এমনই এক কর্মব্যস্ত দিনে এবিসি টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড ইন্ডাষ্ট্রিয়ালের সিইও আরিফ হোসেনের মিরপুরের বাসায় সকালে গিয়ে হাজির হলাম।
কথা শুরু হলো তাঁর প্রয়াত বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুুর আলীকে নিয়ে। জানা গেল, কীভাবে সাধারণ একজন ছেলে থেকে তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় গনমাধ্যম কর্মী এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধর হয়ে উঠেছেন। তার জীবনের পুরোটায় বাবার স্বপ্নের আনাগোনা। বাবা তার স্বপ্ন পুরুষ।
আরিফ হোসেন
জন্ম: ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১, থানাপাড়া কুষ্টিয়া
স্কুল: কুষ্টিয়া মুসলিম হাই স্কুল
কলেজ: কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ও কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ও কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ।বিশ্ববিদ্যালয় : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ও ওয়াটার লো বিশ্ববিদ্যালয় কানাডা।
প্রিয় কবিতা : ছোট বয়সে পড়া কবি নজরুলের কবিতা ” ওঠরে চাষী জগতবাসী ধর কষে লাঙ্গল,~আমরা মরতে আছি ভালো করেই মরবো এবার চল ” কবিতা পড়ে প্রথম ভাবতে শিখিয়ে ছিল।
প্রিয় বই : সংবাদ ও আমি
প্রিয় গান : ‘ কেয়ার অফ ফুটপাত নচিকেতা দুটি হাত শুণে্য ছুড়ছো শুধু আস্ফালনে ’।
সাংবাদিকতা জীবন
সাংবাদিকতার শুরু সেই স্কুল জীবন থেকে। যখন লেখাপড়ার হাতে খড়ি ৫ নম্বর পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। সেখানে স্কুলের খেলার মাঠে গরু চরানোর বিষয়ে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক ইস্পাত পত্রিকাতে। যদিও তিনি তখনও লেখার উপযুক্ত হননি তারপরও সম্পাদক ওয়ালি উল বারী চাচাকে গিয়ে তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে মাঠটি আবার খেলার উপযুক্ত করে নিয়েছিলেন। তারপর খুলনা জেলা স্কুল সেনযোসেফ স্কুল কিংবা কুষ্টিয়ার ১ নং পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া সিরাজুল হক মুসলিম হাই কিংবা কুষ্টিয়া জেলা স্কুল সবখানেই ছিল তার বিদ্রোহী সংবাদিকতার ছোয়া। স্কুল কলেজ সবখানেই চারণ সাংবাদিকতার ছাপ রেখেছেন।
কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে সবচেয়ে কনিষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে আজকের কাগজ পত্রিকাতে কাজ করেছেন সেই ১৯৯১ সাল থেকে। এছাড়া দৈনিক কুষ্টিয়া, দৈনিক আন্দোলনের বাজার, দৈনিক দেশভূমি পত্রিকার বার্তা সম্পাদক কখনও বা নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে ক্রষ্টিয়া জেলাতে সাংবাদিকতার দ্রুতি ছড়িয়েছেন।
এরপর রাজধানীতে এটিএন বাংলায় সাংবাদ্তিা করেছেন ২২ বছর। সাংবাদিক হিসেবে নিয়েছেন দেশী আন্তজার্তিক পর্যায়ের বহু প্রশিক্ষন।
ব্যবসাই জীবন
মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা আরিফ হোসেন ১৫ বছর বয়স থেকে টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতেন। সত্যিকার অর্থে মেধাবী ছেলেটি এসএসসি, এইচএসসি—দুবারই বোর্ডে ভালো ফল করেছিলেন।
আরিফ হোসেন কত রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। জয় আর বাংলা — অপুর্ব আর অনন্ত চার সন্তান নিয়ে সংসার।
পড়ালেখার দিকেই ছিল আরিফ হোসেনের আগ্রহ, ব্যবসার প্রতি সেটা ছিল না একেবারেই। বাবা মা ভাই বোন কেউই শুরুতে চাইতেন না আরিফ হোসেন ব্যবসায় আসুন। আরিফ হোসেন টিউশনি করতেন ছাত্র পড়াতেন। পড়ানোটা উপভোগ করতেন তিনি।ফাঁকে ফাঁকে লেখা লেখির চর্চা আর গনমাধ্যমে পিআর ~ব্যবসাও ভালোই চলছিল। কিন্তু অতিরিক্ত কাজের চাপের শেষ নেই । সে সময় আরিফ হোসেন ব্যবসায়িক অংশীদার কা্উকেই নেননি।
শুরুতে মগবাজারের অফিসে গিয়ে বসে থাকতেন, টুকটাক কাজ করতেন। ধীরে ধীরে ব্যবসার কাজ বড় হতে শুরু করলো । বর্তমানে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।
আরিফ হোসেন বিষয়টিকে দেখেছেন এভাবে, ‘আমি যতই ব্যবসা দেখি না কেন, আমি কিন্তু সাংবাদ্তিা ছাড়তে পারবো না এটা আমার নেশা এটা আমি করবই। সে সময় আমার যারা বন্ধু ছিল, কিংবা যারা ছিল ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী। ওরা বলত, যা-ই করো, ব্যবসা ঠিক রাখতে হবে। ব্যবসায়িক বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারি। এমনকি অনেক বড় বড় ব্যবসায়ি বন্ধুরা অবাক হয়ে বলত, “এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নাও কী করে?” আর আমাদের সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাছে আমি ছিলাম ভাই এর মতো বাবার মতো। কার কী প্রয়োজন, কার কোথায় সমস্যা—সেগুলো খেয়াল রাখি। এমনকি পত্রিকা কিংবা প্রডাকশন হাউসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যাতে তাঁরা সময়মতো বেতন পান, সেটাও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করি।’
আর আরিফ হোসেনের আরেকটি নিয়ম আছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিজের মতো করে টিকতে হবে। একটি প্রতিষ্ঠান অপর প্রতিষ্ঠানকে কোনো আর্থিক ঋণ দেবে না। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এভাবেই চলছে। একের পর এক ব্যবসায়িক সফলতা আসতে থাকল, একসময় নিজের ছোট প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে অংশিদারি ব্যবসা করেন। তারপর আবার অংশিদারি থেকে বেরিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়লেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বত্বাধিকারী এখন তাঁরই। ছেলে জয় আর বাংলা এখন তার ব্যবসায়িক অনুসঙ্গ। ব্যবসা দেখভাল করতে করতে জয় আর বাংলার সাথে চলে খুনসুটি। সন্তানেরা কত ভালো করছেন, এটা বলতে গিয়ে আরিফ হোসেনের চোখে পানি চলে আসে। মনে হয় একজন সার্থক, সফল বাবার সামনে বসে আছেন।
আরিফ হোসেন মনে করেন, তাঁর সব কাজ শেখা বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আলীর কাছ থেকে। যতগুলো বছর বাবা বেঁচে ছিলেন তিনি বাবার ছায়াতেই ছিলেন।১৯৯৬ সালে জীবনের নির্ভরতার ছায়া বাবার সরে যাওয়ার পর নিজেকে মানসিক দিক থেকে আরও শক্ত করেছেন। কারও সামনে কখনো কাঁদেননি। শুধু মনে হয়েছে, সব ঠিকঠাক চালিয়ে নিতে হবে, নিয়েছেনও।
এগিয়ে যাওয়ার গল্প
বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে শুনতে পেতেন অনেক ছেলে কিংবা মেয়ে হয়তো পরচর্চা করছেন কিংবা প্রেমিক প্রেমিকার গল্প করছেন কিংবা শাড়ী-গয়না এসবের গল্প করছেন। সেই আড্ডার সময় তাঁর মনে হতো, এমন কিছু যদি করা যেত, যাতে ছেলেরাই শুধু নয় মেয়েরা মেয়েদের পাশে থাকবেন। একজনের কষ্টের কথা আরেকজন শুনবেন। নিজের জন্যও যে কিছু করা যায়, সেই ভাবনাও তরুণ বয়সের ছেলে মেয়েদের নেই। সবকিছু সামলাতে তাঁদের জীবনের সব সময় চলে যায়। সেখান থেকে বের করে আনতে চান ছেলেদের মতো করে মেয়েদের। ‘ফ্রেন্ডশীপ বাংলাদেশ ’ নামে একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়ে ফেন্ডশীপ বাংলাদেশ থেকে ‘ ফেন্ডশীপ ওয়ান্ড’ হয়ে এগিয়ে চলেছে্ এই ফ্রেন্ডশীপ ওয়াল্ড নিয়ে অনেক কিছু করতে চান আরিফ হোসেন।
‘কোনো ছেলেকে কিংবা মেয়েকে যদি দেখি হতাশায় ভুগছেন, তাঁকে ঝাঁকি দিই, তাঁর কথা শুনি। পাশে থাকার চেষ্টা করি। সবাই একটা আদর্শ পরিবারের ছবি দেখাতে চান। কিন্তু ভেতরে আসলে তাঁরা ভালো থাকেন না। অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদেরও নানা কথা থাকে, যা তাঁরা নানা জায়গায় বলতে চান। কিন্তু নিজেদের কথা বলার জায়গা পান না। তাঁদের কথাও শুনি।’ বলেন আরিফ হোসেন।
সামাজিক কাজ, কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবন—এভাবে আলাদা করে কিছু ভাবেননি। সব মিলিয়েই ভেবেছেন। বিভিন্ন পেশার মানুষের বেশ কয়েকজন অবহেলিত ছেলে মেয়ের পড়াশোনার ভার নিয়েছেন, তাঁদের পড়াচ্ছেন স্কুল কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবিসি টিভির মাদার অর্গানাইজেশন ওয়াল্ড ডিজনি গ্রুপের এশিয়া অঞ্চলের পওধান আরিফ হোসেন। দরিদ্র সাংবাদিক কিংবা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য এককালীন অনুদান দিয়েছেন। এখানকার ছেলেরা কিংবা মেয়েরা যখন ইংরেজিতে ই-মেইল করেন, তাঁদের কোনো সফলতার কথা কিংবা প্রয়োজনের কথা বলেন, ্খআরিফ হোসেনের তখন খুশিতে মন ভরে যায়। যখন এ কথা বলছিলেন, সেই খুশি সামনে বসা মানুষটির মধ্যে দেখতে পাই।
আরিফ হোসেন বলেন, ‘ মুক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠাতা রুবায়েত আমার বন্ধু। তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল একদিন, কী করা যায়। তখনই আমার মনে হলো, এইচএসসি পাস করা ছেলে আর মেয়েদের যদি এই দুই বছরের বিশেষ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ইংরেজি, গণিত, কম্পিউটার ও সব ধরনের পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী করে টেকনিক্যাল শিক্ষা এবং বিএনসিসির মাধ্যমে সামরিক প্রশিক্ষন দিয়ে তৈরি করে তারপর যদি পড়ালেখা করানো যায়, নিশ্চয়ই তাঁরা অনেক ভালো করবেন। আমার আরেক বন্ধু শাহজাহান শাহ এবং আতিকুর রহমান টিটুকে জানালাম আমার ভাবনার কথা। এঁদের পড়াশোনার খরচ চালানোর ব্যাপারে আরও কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বললাম। ভালো কিছু করলে তো নিজের মধ্যেও শান্তি আসে। অনেকে পরে খুব একটা সহায়তা না করলেও আমি সেটা চালিয়ে যাচ্ছি। সেই ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে একজন এবার ওয়াল্ড প্রোগামিং কনটেস্টে অংশ নিয়েছেন। একজন গ্রীসের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশীপে পড়তে গেছে। সেই তো আসল চেঞ্জমেকার।’ এসবের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আলী হাসপাতাল , মোবাইল হাসপাতাল মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন আরিফ হোসেন।
আরিফ হোসেন : এই আমি সেই আমি
কথার শুরুতেই বলেছিলেন, বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আলী থেকে তিনি বন্ধু বাবাকে বেশি মিস করেন। অনুভব করেন, স্বাপ্ন দ্রষ্ঠা বাবা তাঁর পাশে সারাক্ষণ আছেন। ‘আরিফ বলে ডাকছেন। বাবা মনসুর আলী চাইতেন তাঁর ছেলে আরিফ কোন অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দিক, পার্টিতে যাক। বাবা মারা যাওয়ার পর বুঝতে পারছেন, কেন তিনি চাইতেন । একজন মানুষ সমাজে ভালোভাবে থাকতে পারেন, সেটা এই সমাজ অনেক সময় মেনে নিতে পারে না। অনেক উৎসুক চোখ, উতরোল মন চারপাশে। সেসব থাকবেই। কিন্তু জীবনে এগিয়ে যেতে হলে এ সব সমস্যা মোকাবিলা করেই এগোতে হবে, তেমনটাই ভাববার উপযুক্ত হিসেবে গগে উঠবার জন্য এসোসিয়েশন প্রয়োজন।
জীবনে, সম্পর্কে আগেও চড়াই-উতরাই এসেছে, সেসব মোকাবিলা করেই তো এগিয়েছেন। ‘যদি মনে হয় অনেক কষ্ট জীবনে, অনেক সংগ্রাম—তবে আর এগোনো যায় না। জীবনের ট্র্যাজেডিকে ট্র্যাজেডি মনে করা যাবে না।’ বলেন আরিফ হোসেন।
আগামী ১০ ডিসেম্বর । এটা নিয়ে খুব উত্তেজিত তিনি। ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরুষোত্তম লালের প্রকাশনা সংস্থা ও রাইটারস ওয়ার্কশপের ওপর ‘রাইটারস ওয়ার্কশপ: এজেন্ট অব চেঞ্জ’ বিষয়ে পিএইচডি শেষ করেছেন গত বছর। ‘কেউ যখন আমাকে ডক্টর রুবানা হক বলেন, নামের পাশে লেখেন, কী যে ভালো লাগে—সেটা বোঝানো যাবে না। জীবনে শেষবারের মতো সমাবর্তনে হ্যাট-গাউন পরব, সেটা নিয়ে খুবই রোমাঞ্চিত আমি। এর পেছনে পরিবার ছাড়া আরেকজন মানুষের বড় ভূমিকা আছে—তিনি এখন অধ্যাপক নারীনেত্রী মালেকা বেগম, তাঁকে সঙ্গে নিয়ে সমাবর্তনে যেতে চাই। আমি আমার সারা জীবনের সকল শিক্ষক, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে খুব কৃতজ্ঞ।’ ২০০৮ সালে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল নিয়ে এমএ শেষ করেন।
রুবানা হক একজন সৃজনশীল মানুষ। কবিতা লেখেন, প্রবন্ধ লেখেন, কবিতা লিখে পেয়েছেন সার্ক সাহিত্য পুরস্কার। আবার সময় পেলে নিজে মোমবাতি তৈরি করে উপহার দেন। বাড়িভর্তি নানা রকমের শিল্পকর্ম দেখলে বোঝা যায়, তিনি একজন বড় শিল্পসংগ্রাহকও বটে। অষ্টপ্রহর ব্যস্ততা। এতগুলো প্রতিষ্ঠান চালানো। সামাজিক দায়িত্ব পালন। শি ফর শি। কবিতায় বুঁদ হয়ে থাকা খানিকক্ষণ। সন্তান–সংসার। মোমশিল্পে মগ্নতা। আর রোবট অ্যালেক্সার খবরদারি কিংবা ঘরকন্না। অবসর কই? কোথায় অবকাশ!
তবু কি রুবানা একটিবার তাকান না অঘ্রানের আকাশের দিকে? নীল অনন্ত আকাশ, অসীম শূন্যতা। শূন্যতার মধ্যে আশার মতো সাদা মেঘ। মেঘের গায়ে রোদের পরশ। তাঁর কি মন কেমন করে?