নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করায় আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে দণ্ডিত হওয়ায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক ইনস্টিটিউটের (বিজ) অডিটোরিয়ামে বৃহস্পতিবার এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। ‘রোহিঙ্গা ক্রাইসিস অ্যান্ড দ্য ইমার্জিং সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জেস: রেসপন্স স্ট্র্যাটেজি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজক ছিল বিজ।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘যে দুটি শর্তে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে সেখানে রাজনীতির কোনো কথা নেই। শর্তের একটি হলো বাসায় বসে চিকিৎসা নেবেন, অন্যটি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়া তার দলীয় কার্যালয়ে গেলে বাধা দেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘উনি কী করবেন আর কী করবেন না, সেটি উনার বিষয়। আমি উনাকে কী পরামর্শ দেব? তবে আইনি পরামর্শ প্রয়োজন হলে উনাদের আইনজীবীদের কাজে লাগাতে পারেন। না হলে আমার কাছে চিঠি লিখুক।’
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনিসুল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যাটির দীর্ঘ ছয় বছর হয়েছে, যা আমাদের বিভিন্ন নন-ট্র্যাডিশনাল সিকিউরিটির হুমকির মুখে ফেলেছে। বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সমস্যাটি সমাধান করার জন্য। তবে এ সমস্যার সমাধান মিয়ানমারেই নিহিত। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা সংস্থার পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক পদক্ষেপই পারবে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করতে।’
রোহিঙ্গা থেকে উদ্ভূত সমস্যা নিয়ে আলোচনাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘অপরাধ, মাদক, মানব পাচার, স্বাস্থ্য, খাদ্য, শিক্ষাসহ আরো অনেক নন-ট্র্যাডিশনাল সমস্যা তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও এসব সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের মোট মৌলিক চাহিদার পূরণ হয়েছিল কেবল ২ শতাংশ। ২০২১ সালে এসে সেটি এক-তৃতীয়াংশে পৌঁছেছে।’
রোহিঙ্গা সমস্যার পেছনে অস্ত্র ব্যবসা জড়িত থাকায় সেটি সমাধানের মুখ দেখছে না বলে উল্লেখ করেছেন বিজের রিসার্চ ফেলো এএসএম তারেক হোসেন শিমুল। তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুর, চীন, ভারতসহ অন্যান্য দেশ অস্ত্র ও সাবমেরিনসহ বিভিন্নভাবে মিয়ানমার সরকারকে সহযোগিতা করছে। এমনকি পশ্চিমা রাষ্ট্রও সহযোগিতা করছে। এ সমস্যা সমাধান করার জন্য আমাদের দ্বিপক্ষীয় নয়, বহুপক্ষীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সমস্যার কার্যকর সমাধানের জন্য মিয়ানমারকে অস্ত্র বা অন্যভাবে যারা সহযোগিতা করছে তাদের ওপর স্যাংশন আরোপ করতে হবে।’
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ‘কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’-এ নীতিতেই সরকার এগোচ্ছে এবং এগোবে বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বিজের সাবেক চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মুনসী ফয়েজ আহমেদ, বিজের ডিরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবীব উদ্দিন প্রমুখ।