বড় মে‌য়ে রাজনী‌তি কর‌তে চাই, আপ‌ত্তি নেই : ভিওএ`কে ফখরুল “ – দৈনিক মুক্ত বাংলা
ঢাকাশুক্রবার , ২১ এপ্রিল ২০২৩
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি-ব্যবসা
  3. আইন ও আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আরও
  6. ইসলাম ও ধর্ম
  7. কোভিট-১৯
  8. ক্যারিয়ার
  9. খেলা
  10. জেলার খবর
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. বিনোদন
  13. মি‌ডিয়া
  14. মু‌ক্তিযুদ্ধ
  15. যোগা‌যোগ

বড় মে‌য়ে রাজনী‌তি কর‌তে চাই, আপ‌ত্তি নেই : ভিওএ`কে ফখরুল “

সম্পাদক
এপ্রিল ২১, ২০২৩ ১১:৪৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সাইফুল র‌শিদ বিপ্লব::

ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের শতরূপা বড়ুয়া সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ সাক্ষাৎকার নেন। শুরুতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে এ পর্যন্ত ২৮৩০ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫শ’র উপরে সরাসরি বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমাদের দল করেন না, এমন সাংবাদিকদেরও এই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এক মাস আমি জেলে ছিলাম। তখন দেখেছি স্কুলের বাচ্চা , কলেজে পড়া ছেলেদের জেলে নেওয়া হয়েছে। এই আইনের সমস্যা, সব চেয়ে বড়, যে কেউ মামলা করলে গ্রেপ্তার করা হবে। ননবেলেবল। আইনমন্ত্রী স্বরাস্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এটা প্রয়োগ করা হবে না। অথচ শামসুজ্জামানকে করা হলো। নওগার জেসমিনকে আসামী করা হলো। আমরা বারবার বলছি, বাতিল করা দরকার। সংশোধন করলেই হবে না।

ফখরুল বলেন, সরকার যেটা সমস্যা করছে, তাদের মধ্যে ফোবিয়া কাজ করছে। সরকারের বিরুদ্ধে লিখলেই আক্রমণ করা হয়। মামলা করা হয়। একটা ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে।  সাংবাদিক বা রাজনীতিবিদ বলুন, যারা লেখালেখি করেন, সবা্ি একটা ভয়ের মধ্যে কাজ করছে। দেশে এখন ভয়ের সংস্কৃতি, সেলফ সেন্সরশীপ। আইনটি বাতিলের জন্য সম্পাদক পরিষদ বা নোয়াবের সঙ্গে বসবেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভয়ের কালচারটা এমন জায়গায় পৌঁছেছে, আমরা তাদের সঙ্গে বসতে চাইলাম। তারা আমাদের সঙ্গে দেখাও করতে চান না। এখন সংবাদপত্রের যে সা¦াধীনতা তা রক্ষা করতে নিজেদের স্বার্থে তাদের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সরকার বিভক্তির রাজনীতি করে। সাংবাদিকরা বিভক্ত। সম্পাদকরা বিভক্ত। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, প্রথম আলোর বিষয়টা নিয়ে কীভাবে কিছু সম্পাদক ও সাংবাদিক বিরূপ মন্তব্য শুরু করলেন। এটা কিন্তু সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে যায় না। বিপক্ষে যায়। মূল কারণটা মিডিয়ার ফোবিয়া। বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে গণতন্ত্রের চর্চার ক্ষেত্রে।

প্রশ্ন করাহয়, জাতিসংঘ ডিএসএ’র অপপ্রয়োগ বন্ধের দাবি জানিয়েছে। আপনারা এটা বাতিলের  জন্য কী করছেন ?

উত্ত‌রে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সব সময় এই আইনের বিরুদ্ধে কথা বলছি। আন্দোলন করছি। মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি।

বিএনপির বিরুদ্ধে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে প্রশ্না করা হলে ফখরুল বলেন, অভিযোগটা কারা করছে? সরকার করছে, তাই না? ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। যেটা সত্যি, আমরা কোনো লবিস্ট নিয়োগ করিনি। আর আমাদের সেই আর্থিক সামর্থ্য এখন পর্যন্ত নেই। কিন্তু সরকারের ঘোষণা মতে, প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলার নিয়োগ করেছে এই লবিস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে। এটা তো পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই বলেছেন। সুতরাং এটা ডাহা মিথ্যা যে, আমরা লবিস্ট নিয়োগ করেছি। আমরা কোনো লবিস্ট নিয়োগ করিনি, সরকারই করেছে। যাতে তারা তাদের বিভিন্ন অপকর্মকে বহির্বিশে^, বিশেষ করে, আমেরিকার কাছে হালাল করতে পারে।

নওগাঁয় র‌্যাবের হেফাজতে সরকারী কর্মচারী জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় আপনাদের কর্মসূচী কী? এই প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা ওখানে ডেমোনেস্ট্রেশন করেছিলাম। পরবর্তীকালে ঢাকা মহানগরে এ নিয়ে কর্মসূচী করেছি। জেসমিনের বাড়িতে আমাদের টিম গেছে। আমরা চেষ্টা করেছি যে, যতোদূর সম্ভব এটাতে লাইমলাইটে নিয়ে আসতে। সে কাজটা আমরা করেছি, চেষ্টা করেছি। একটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে যে, এই মহিলা, যিনি ক্ষতিগ্রস্ত; তার পরিবার এতোটাই ভীত যে, কোনো মামলা করতেই রাজি হয়নি। এ কারণে ইস্যুটাকে ঠিক সেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়নি। কিন্তু তারপরও বিষয়টা আমরা জনগণের সামনে তুলে ধরেছি। প্রতিবাদ করেছি।

শতরূপা রায় বলেন, র‌্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর গুম, খুন, ক্রসফায়ার কিছুটা কমেছিলো। কিন্তু সম্প্রতি আবার তা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মানবাধিকার রিপোর্টে বিষয়টি আবার এসেছে। এছাড়া ডয়চে ভেলের নেত্র নিউজের সঙ্গে বানানো র‌্যাবের ওপর ডকুমেন্টারিতেও গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে র‌্যাবের বিষয়ে। এ ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কী? র‌্যাবের জন্মদাতা সরকার হিসেবে আপনারা যদি কখনো ক্ষমতায় যান, র‌্যাবের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেবেন? র‌্যাব রাখবেন নাকি বিলুপ্ত করে দেবেন?

জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, র‌্যাব যখন গঠন করা হয়, তার মূল লক্ষ্য ছিলো সন্ত্রাসকে নিয়ন্ত্রণ করা। বিভিন্ন রকম দুর্বৃত্তায়ন, হিউম্যান অ্যাক্টিভিটি- সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা, একটা এলিট ফোর্স হিসেবে। আমরা যতদিন রাষ্ট্রের দায়িত্বে ছিলাম, র‌্যাব কিন্তু সেই কাজটাই করেছে। কখনোই র‌্যাবকে পলিটিক্যাল কোনো কাজে ব্যবহার করা হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে বা কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সেটা ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা দেখেছি, র‌্যাবকে পুরোপুরিভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য। যে কারণে র‌্যাবকে তখন এতো ফ্রি হ্যান্ড দিয়ে দেওয়া হয়েছিলো যে, তারা তো সে কাজটা করেছেই, উপরন্তু ব্যক্তিগত ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন রকম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। বিভিন্নভাবে তারা হয়রানি করেছে। যেমন নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারের ঘটনা। ২০১৫ সালে আমি যখন জেলে ছিলাম, তখন ওই মামলায় অভিযুক্ত দুয়েকজনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা বলেছে, আমরা তো নিজেরা কিছু করিনি। উপরের নির্দেশ ছাড়া করতে পারি না। এটার প্রমাণ হলো ডয়চে ভেলের ভিডিওটা, যেটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সেই ভিডিওতে এটা প্রমাণ হয়েছে, উপরের নির্দেশ ছাড়া, শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশ ছাড়া এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় না। পরবর্তীতে আপনার দেখেছেন, স্যাংশন এলো বিভিন্নভাবে, অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডের রিঅ্যাকশনে। এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং র‌্যাব তখনই করতে সক্ষম হয়েছে, যখন রাজনৈতিক সমর্থন তারা পুরোপুরি পেয়েছে। যখন সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে যখন তাদের একটা প্রটোকল দেওয়া হয়েছে। আমরা আন্দোলন করেছি। এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন গ্রেপ্তার হন, তার আগের দিনও জনসভায় এবং বিভিন্নভাবে তিনি বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। আমরাও র‌্যাবের বিষয়টাকে ইন্টারন্যাশনালি তুলে ধরেছিলাম। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এইযে আপনি বলেছেন, আমরা যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাই তাহলে এ সম্পর্কে আমরা কি ব্যবস্থা নেব? প্রথম কথা যেটা, কোনমতেই র‌্যাবকে রাজনৈতিকভাবে কখনো ব্যবহার করা হবে না। আমরা সিদ্ধান্ত নেব, সেটা তখনকার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে, ইতিমধ্যেই র‌্যাব সম্পর্কে যে জনমনে একটা পারসেপশন তৈরি হয়েছে, এই পারসেপশনটা কখনোই পজিটিভ না। এটা আমরা সে সময় সিদ্ধান্ত নেব যে আমরা সেটা কী করব। তবে কোনভাবেই কোন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রতিপক্ষকে বা ভিন্ন মতাবলম্বীদেরকে দমন করবার জন্য সেটা ব্যবহার করা কখনোই হবে না।

প্রশ্ন ছিলো, আপনারা কি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি নিয়ে সরকারের সাথে আলোচনা করবেন ?

জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, আমাদের ১০ দফা দাবি আমরা দিয়েছি, এবং সেটা শুধু আমরা না, অনেকগুলো রাজনৈতিক দল মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা দিয়েছি। তার মধ্যে প্রধান দাবিটি হচ্ছে সরকারের পদত্যাগ। দ্বিতীয়টি হচ্ছে সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে। তৃতীয়টি হচ্ছে যে বিলুপ্ত করার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে যদি সরকার রাজি হয়, আমাদের দাবিগুলো যদি তারা মেনে নেয় তাহলে অবশ্যই সেগুলো নিয়ে আমরা তখন আলোচনা করতে পারি । কিন্তু তার আগেই আলোচনায় বসার তো কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দাবিগুলো তো শুধু বিএনপির দাবি না, বা আমরা যারা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করছি তাদের দাবি না, সমস্ত জাতির একটাই দাবি যে একটা নিরপেক্ষ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হলে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অবশ্যই একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এসে নির্বাচনটা হতে হবে নির্বাচনকালীন সময়ে। তা না হলে এখানে অংশগ্রহণমূলক কোন নির্বাচন হবে না, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য কোন নির্বাচন হবে না

আন্দোলন ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের এই আন্দোলনটা যখন শুরু করি, ২২ আগস্ট ২০২২ সালে প্রথম ভোলাতে, সেই সময় আমাদের দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন এবং সেটা রাজপথে। তারপর থেকে আমাদের ১৭ জন নিহত হয়েছেন এবং সবগুলোই কিন্তু রাজপথে। আন্দোলনের মধ্যেই, মিছিলের মধ্যে, র‌্যালির মধ্যে এবং সবগুলো শান্তিপূর্ণ মিছিল, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, এগুলো প্রত্যেকটিতেই কিন্তু হামলা হয়েছে এবং সেটা পুলিশ করেছে, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা করেছে। ৪ এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের নামে মামলা হয়েছে ৪৩৬ টি, এখন পর্যন্ত আমাদের যেটা জানা আর কি। আর মোট গ্রেপ্তার হয়েছে ৩০৫০ জন। এছাড়া নাম ধরে এফআইআর করেছে, এজাহার করেছে, তার আসামির সংখ্যা ২১,৩১৭ জন। আর অজ্ঞাত আসামী ৩৪,১৭৩ জন। গত এক যুগ ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ যেটা করছে, সেটা হচ্ছে কোন একটা ইনসিডেন্ট হলো বা হলো না, যেটাকে আমরা বলি গায়েবী মামলা। মামলা যখন দেয়, মামলা দেওয়ার সময় তারা কতকগুলো নাম দিয়ে দেয়। সে নামগুলো হচ্ছে ওই এলাকার ইউনিটের নেতাকর্মীদের নাম, অথবা আমাদেরও নাম থাকে সেখানে। সেটা আবার আরেকটা অস্ত্র, যে অস্ত্র দিয়ে তারা আমাদের নেতাকর্মী, তাদেরকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখায় এবং সেখানে একটা বাণিজ্য হয়, টাকা নেয় তাদের কাছে বড় অঙ্কের। সেই টাকা নিয়েও তারা তখন মানুষকে সেভাবে হয়রানি করে। এটা আপনাকে বললাম ২২ আগস্ট থেকে এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত আমাদের একটা হিসাব আছে, এগুলোর এফআইআর কপি পর্যন্ত আমাদের কাছে আছে, তাতে প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে, নেতাকর্মী, আমাদের গ্রাম বাংলা সবখানে, ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলাগুলা আছে এবং সবচেয়ে বেশি গায়েবী মামলা যেটা আমরা বলি, অর্থাৎ কোন ঘটনাই ঘটেনি, মামলা দিয়ে দিয়েছে, এটা করেছে আসল নির্বাচনের আগে। এখন আবার গত এক বছর ধরে, ২২শে আগস্ট থেকে এই ধরনের প্রবণতা শুরু হয়েছে, মিথ্যা মামলা গায়েবী মামলা দেয়া শুরু হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে মোট মামলার সংখ্যা প্রায় ৯০ এর কাছাকাছি হবে, পুরোটা আমিও বলতে পারছি না ঠিকমতো। ৮৬ পর্যন্ত জানতাম, এখন সব মিলিয়ে বোধ হয় ৯০ হয়েছে। রিসেন্টলি তো আপনি জানেন যে একটা মামলা, যেটা হচ্ছে ৭ ডিসেম্বরে আমাদের যে ঘটনা ঘটলো পুলিশ আক্রমণ করলো আমাদের অফিসে, সেখান থেকে প্রায় সাড়ে চারশ নেতা, তাদেরকে এরেস্ট করলো এবং তার পরের দিন আমাকে বাসা থেকে নিয়ে গেল, মির্জা আব্বাসকেও। সেখানে দুটো মামলা হয়েছে, এটা এইভাবে আছে। এই মামলাতে আমরা জামিন পেয়েছি, জামিনে আছি।

মির্জা ফখরুলকে প্রশ্ন করা হয়, আপনারা কোন পর্যায়ে গিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন করতে বাধ্য হবেন? এজন্য কি আপনাদের কোন নির্দিষ্ট টাইম ফ্রেম আছে?

জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, টাইমফ্রেম করে তো আন্দোলন হয় না । আমরা আমাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করেছি, দাবিগুলো নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি। আমরা যেটা মনে করি যে এই আন্দোলনগুলোতে জনগণ সম্পৃক্ত হয়েছে। আপনার নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে আমাদের বিভাগীয় সমাবেশ যেগুলো আমরা করেছি, সে সমাবেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়েছে, সাধারণ মানুষ উপস্থিত হয়েছে। সরকার বাধা দেয়ার জন্য গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ করে দিয়েছিল, ট্রান্সপোর্ট স্ট্রাইক করে দিয়েছিল এবং গ্রেপ্তার করছিল। তার মধ্যেও কিন্তু মানুষ সম্মিলিতভাবে উপস্থিত হয়েছে। এমনও হয়েছে যে একশ মাইল সাইকেল করে এসেছে, কলার ভেলা বানিয়ে নদী পার হয়েছে, তিনদিন ধরে ব্রেক করে করে এসেছে। জনগণের পূর্ণ সমর্থন এই আন্দোলনের প্রতি আছে। এখন জনগণ যেটা চায়, অতি দ্রুত এই সরকারের পরিবর্তন চায় এবং একটা নিরপেক্ষ সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটা নির্বাচন তারা দেখতে চায়।

ভয়েস অব আমেরিকার প্রশ্ন, লন্ডনে বসবাসরত আপনাদের নেতা তারেক রহমান, তিনি কি সেদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন?

মির্জা ফখরুল বলেন, না আমরা যতদূর জানি নাগরিকত্ব নেননি। রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন ৷
পরের প্রশ্ন ছিলো, বর্তমানে তারেক রহমানের আয়ের উৎস কী?

জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেখুন, বাংলাদেশে বা সব দেশেই যারা, বিশেষ করে শীর্ষ পর্যায়ে যারা রাজনীতি করেন, তাদের বেশিরভাগই . বিশেষ করে এই সাব কন্টিনেন্টে, এই প্রশ্নটা কেউ করে না। এজন্য যে, আমাদের অভিজ্ঞতায় যেটা দেখা গেছে যে, জনগণই এইসব নেতাদের, যারা শীর্ষ নেতা থাকেন, তাদের সবচেয়ে বড় সমর্থন দেন তারা। আপনি শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের কথা বলেন, বা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কথা বলেন, তাঁরা কিন্তু এভাবেই এদেশের রাজনীতিতে অবদান রেখেছেন। একইভাবে, আজকে তারেক রহমান সাহেব সবচাইতে সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। তিনি এখন নির্বাসিত অবস্থায় দেশের বাইরে অবস্থান করছেন একটা এসাইলাম নিয়ে। সেখানে নেতা কর্মী আমরা যারা আছি, বা প্রবাসে যারা আছেন, তারা তাকে সম্পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে এবং জনগণই তাকে সে সমর্থন দিচ্ছে। সম্পূর্ণ জনগন থেকেই তার আয়ের উৎস।

পরের প্রশ্ন ছিলো, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বা এমনকি চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারকে চাপ দিয়ে রাজি করাতে না পারাটা… এ বিষয়টা আপনারা কিভাবে দেখছেন? এতে বিএনপি’র দায়ভার কতটা?

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির দায়টা কোথায় দেখলেন আপনারা আমি ঠিক বুঝি না। সরকারতো খুব পরিকল্পিতভাবেই বেগম খালেদা জিয়াকে একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে তাকে কারা অন্তরীণ করেছিল এবং তিনি অসুস্থ হওয়ার পরেও, বারবার বিভিন্ন আন্দোলন করার পরেও, শেষ পর্যন্ত তাকে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল, পিজি হাসপাতালে। তখনও তিনি বন্দিই ছিলেন। এরপরে করোনা শুরু হল, তখন সম্ভবত তারা মনে করেছিল যে করোনার কারণে হঠাৎ করে সেখানে যদি কিছু হয়ে যায়, তার দায়িত্ব সরকারের নিতে হবে, সে কারণে তারা তখন তার ফ্যামিলির আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে তার বাসায় গৃহবন্দী করে রেখেছে। যদিও সরকার বলছে যে, ছয় মাস করে তারা সাজা স্থগিত করছে, এটা ঠিক আমি বুঝতে পারি না আরকি। সাজা স্থগিত করা মানে যদি এটা হয় যে তিনি মুক্ত, তাহলে তো ভিন্ন ব্যাপার, কিন্তু তিনি তো মুক্ত নন । আর শর্তসাপেক্ষে তার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। তো আমরা এ আন্দোলন করছি এবং সবসময় তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য চেষ্টা করেছি । কিন্তু তার চিকিৎসার জন্য তার পরিবার বারবার আবেদন করার পরেও সেই আবেদনে সরকারতো সারা দেয়ইনি, বরঞ্চ তারা বিভিন্নরকম বিদ্রুপাত্নক কথাবার্তা বলেছে। আসলে খালেদা জিয়াকে তারা বাইরে আনতে চান না, কারণ তারা মনে করে যে খালেদা জিয়া বাইরে আসলে তাদের বিরুদ্ধে যে জনস্রোত গড়ে উঠবে, সেটাকে তারা প্রতিরোধ করতে পারবেনা। খালেদা জিয়া একজন ক্যারিশমাটিক লিডার, এবং তার জনপ্রিয়তা সবসময়ই অতুলনীয়। সেই নেতাকে তারা সহজে বাইরে আসতে দিতে চান না, তার চিকিৎসা করতে দিতে চান না, সেটা যথেষ্ট অমানবিকও বটে।

শেষ প্রশ্নে শতরূপা বলেন, এবারে একটি ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ। আপনি বহুদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আপনি কি চান আপনার মেয়েরা রাজনীতিতে আসুক?

জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি চাইলেই তো হবে না। আমার বড় মেয়ে, তার যে পেশা, সেই পেশা হচ্ছে সে একজন সাইয়েন্টিস্ট। সে অস্ট্রেলিয়াতে কাজ করছে। এখন সে যদি আসতে চায়, আমি তো অবশ্যই খুশি হব । কারণ আমি তো মনে করি যে, রাজনীতি একটা জায়গা যেখানে থেকে কিছু মানুষের সেবা করার সুযোগ আছে, দেশকে কিছু দেয়ার সুযোগ আছে, এবং নিজের যে চিন্তাভাবনা যেগুলো থাকে সেগুলো বাস্তবে প্রদর্শনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সেদিক থেকে তো আমার কোন আপত্তি নেই। আর আমার ছোট মেয়ে, সে বলা যায় যে তার চিন্তাভাবনাগুলো একটু ভিন্ন। সে একটু সৃষ্টিশীল মেয়ে সে একটু ছবি আঁকতে ভালোবাসে, খুব ভালো ডিজাইন করে সে, যেটাকে আমরা বলি যে ফ্যাশন ডিজাইনিং, সে খুব ভালো করতে পারে। প্রফেশনে সে একজন শিক্ষিকা । সে রাজনীতির ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নয়। তবে আমার বড় মেয়ের একটু আগ্রহ আছে। সে জানতে চায় বিভিন্নভাবে এবং সে আসতে চাইলে আমি অবশ্যই সেটাকে স্বাগত জানাবো।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।