🙏🇧🇩🇧🇩🙏
প্রিয় সন্তান,
আমি তোমাকে ৩ টি কারনে এই চিঠিটি লিখছি…
১। জীবন, ভাগ্য এবং দুর্ঘটনার কোন নিশ্চয়তা নেই, কেউ জানে না সে কতদিন বাঁচবে।
২। আমি তোমার বাবা, যদি আমি তোমাকে এই কথা না বলি, অন্য কেউ বলবে না।
৩। যা লিখলাম, তা আমার নিজের ব্যক্তিগত তিক্ত অভিজ্ঞতা- এটা হয়তো তোমাকে অনেক অপ্রয়োজনীয় কষ্ট পাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে।
জীবনে চলার পথে এগুলো মনে রাখার চেষ্টা করবে:
১। যারা তোমার প্রতি সদয় ছিল না, তাঁদের উপর অসন্তোষ পুষে রেখ না। কারন, তোমার মা এবং বাবা ছাড়া, তোমার প্রতি সুবিচার করা কারো দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। আর যারা তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছে – তোমার উচিত সেটার সঠিক মূল্যায়ন করা এবং কৃতজ্ঞ থাকা। তবে তোমার সতর্ক থাকতে হবে এজন্য যে, প্রতিটি মানুষেরই প্রতি পদক্ষেপের নিজ নিজ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। একজন মানুষ আজ তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করছে – তার মানে এই নয় যে, সে সবসময়ই ভাল ব্যবহার করতে থাকবে আজীবন। কাজেই খুব দ্রুত কাউকে প্রকৃত বন্ধু ভেবো না। বন্ধু ভাবার আগে অবশ্যই একটু সময় নেবে।
২। জীবনে কিছুই কিংবা কোন মানুষই “অপরিহার্য” নয়, যা তোমাকে পেতেই হবে। একবার যখন তুমি এ কথাটির গভীরতা অনুধাবন করবে, তখন জীবনের পথ চলা অনেক সহজ হবে – বিশেষ করে যখন বহুল প্রত্যাশিত কিছু হারাবে, কিংবা তোমার তথাকথিত আত্মীয়-স্বজনকে তোমার পাশে পাবে না। তখন বুঝতে পারবে জীবন হল আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা।
৩। মহাকালের বিচারে জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। আজ তুমি জীবনকে অবহেলা করলে, কাল জীবন তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে। কাজেই জীবনকে তুমি যতো তাড়াতাড়ি মূল্যায়ন করতে শিখবে, তত ই জীবন কে আরো বেশী করে উপভোগ করতে পারবে।
৪। ভালবাসা একটি ক্ষণস্থায়ী অনুভূতি ছাড়া কিছুই নয়। মানুষের মেজাজ আর সময়ের সাথে সাথে এই অনুভূতি বিবর্ণ হবে। যদি তোমার তথাকথিত কাছের মানুষ তোমাকে ছেড়ে চলে যায়, ধৈর্য ধরো, সময় তোমার সব ব্যথা-বিষন্নতা কে ধুয়ে-মুছে দেবে। কখনো প্রেম-ভালবাসার মিষ্টতা এবং সৌন্দর্যকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না, আবার ভালবাসা হারিয়ে বিষণ্ণতায়ও অতিরঞ্জিত হবে না।
৫। অনেক সফল লোক আছেন যাদের হয়তো উচ্চশিক্ষা ছিল না – এর অর্থ এই নয় যে তুমিও কঠোর পরিশ্রম বা শিক্ষালাভ ছাড়াই সফল হতে পারবে! তুমি যতোটুকু জ্ঞানই অর্জন করো না কেন, তাই হলো তোমার জীবনে পথচলার সহায়ক শক্তি। কেউ ছেঁড়া কাঁথা থেকে লাখ টাকার অধিকারী হতেই পারে, তবে এজন্য তাকে অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে।
৬। আমি আশা করি না যে, আমাদের বার্ধক্যে তুমি আমাদের আর্থিক সহায়তা দিবে। আবার আমরাও সারাজীবন ধরে তোমাদের অর্থ সহায়তা দিয়ে যেতে পারব না। যখনি তুমি প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখনি গার্ডিয়ান হিসেবে আমাদের অর্থ-সহায়তা দেবার দিন শেষ। তারপর, তোমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে – তোমরা কি পাবলিক পরিবহনে যাতায়াত করবে, নাকি নিজস্ব লিমুজিন হাঁকাবে; গরীব থাকবে নাকি ধনী হবে। এ সিদ্বান্ত তোমাদেরকেই নিতে হবে।
৭। তুমি তোমার কথার মর্যাদা রাখবে, কিন্তু অন্যদের কাছে তা আশা করবে না। মানুষের সাথে ভালো আচরন করবে, তবে অন্যরাও তোমার সাথে ভালো আচরণ করবে – তা সব সময় প্রত্যাশা করবে না। যদি তুমি এটি না বুঝতে পারো, তবে শুধু অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রণাই পাবে।
৮। আমি অনেক বছর ধরে লটারির টিকেট কিনেছি, কিন্তু কখনও কোন পুরষ্কার পাইনি। তার মানে হলো এই যে – যদি তুমি সমৃদ্ধি চাও তবে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বিনামূল্যে এই জগতে কোথাও কিছু জুটবে না।
৯। তোমার সাথে আমি কতোটা সময় থাকবো – সেটা কোন ব্যাপার না বরং এস আমরা আমাদের একসাথে কাটানো মুহুর্তগুলো উপভোগ করি …মূল্যায়ন করি। বর্তমান সময় হল সবচেয়ে দামী ও মূল্যবান, এ কথা মনে রেখ আজীবন। তাহলে তুমি জিতবেই।
১০। ভালোবাসা সহ,
একজন সিনিয়র সিটিজেন।
_________
[সংগৃহীত]