অয়োময় ” ধারাবাহিক নাটকের চতুর্থ পর্ব প্রচারের পর আমার স্ত্রী ( গুলতেকিন) একটি অসম্ভব রুপবান ছেলের জন্ম দিলেন। ছেলেটি দু’দিন বেঁচে রইল- তৃতীয় দিনের দিন মারা গেল। শোক ও দুঃখে পাথর হয়ে যাওয়া স্ত্রীকে নিয়ে ঘরে ফিরেছি। বাচ্চারা চিৎকার করে কাঁদছে। আমার মা’কে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। আর আমি কি করছি! মাথা নিচু করে লিখে যাচ্ছি অয়োময়ের নবম, দশম পর্ব। আমি দুইদিন পর আমেরিকা চলে যাবো। আমাকে পান্ডুলিপি দিয়ে যেতে হবে।
লিখতে লিখতে হঠাৎ কি মনে হলো। বিছানায় শুয়ে থাকা স্ত্রীর দিকে তাকালাম। দেখি সে জলভরা চোখে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে। হয়তো ভাবছে, এই পাষাণ-হৃদয় মানুষটির সঙ্গে আমার বিয়ে হলো?
আমি তার পাশে গিয়ে বসলাম না, মাথায় হাত রাখলাম না। সান্ত্বনার কথাও কিছু বললাম না। আমার হাতে সময় নেই।
একদিন আমার সব কাজ শেষ হবে। চাঁদনী পসর রাতে মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হব। তখন এ জীবনে সঞ্চিত সমস্ত ব্যথার কথা ভেবে চিৎকার করে কাঁদবো। আজ আমার কাঁদার অবসর নেই।
📖 এলেবেলে
✒️ হুমায়ূন আহমেদ – Humayun Ahmed
@ সংগৃহীত এলেবেলে বই থেকে ।