বিনোদন প্রতিবেদক ::
‘দেবী চৌধুরানী’র পর সুচিত্রা সেনকে নিয়ে’কৃষ্ণকান্তের উইল’ ছবির শুটিং শুরু করেন দীনেন গুপ্ত। রোহিণী চরিত্রে মহানায়িকা।চোদ্দ দিন শুটিং হয়েছিল কৃষ্ণকান্তের উইলের। গোবিন্দলালের ভূমিকায় ছিলেন রঞ্জিত মল্লিক। এত ছবি করেছেন অথচ কান্নার দৃশ্যে সুচিত্রা সেন কোনদিন গ্লিসারিন ব্যবহার করেননি।
দীনেনবাবুর মুখে শুনেছিলাম কৃষ্ণকান্তের উইলের সেই রকমই একটি দৃশ্যের শুটিংয়ের গল্প যেখানে রোহিণীর চোখে জল। কেঁদে ফেললেন সুচিত্রা সেন। গোবিন্দলাল ও রোহিণীকে নিয়ে এই শটটা এগারবার শট টেক করেছিলেন দীনেন বাবু। ক্যামেরার সামনে রোহিনীরুপি সুচিত্রা সেন রয়েছেন, পিছনে রঞ্জিত মল্লিক। কিন্তু প্রতিবারই এমনই একটা ঘটনা ঘটছে সংলাপের সঙ্গে রঞ্জিতবাবুর অভিব্যক্তি কিছুতেই মিলছে না। অনেক সময় চেষ্টা করেও ইপ্সিত ফল পাওয়া যায় না। এক এক সময় কোন একটা জায়গায় কিভাবে যেন আটকে যায়। রঞ্জিতবাবুর ক্ষেত্রে সেরকমই ঘটেছিল। কিন্তু সুচিত্রা সেনের অদ্ভুত ব্যাপার ওই এগারবারই যেখানে চোখে জল আসার কথা ঠিক জায়গায় ঠিক সময় চোখের জল তাঁর।
দীনেনবাবু বললেন, ‘নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। সুচিত্রা সেন ছাড়া দ্বিতীয় কোন নায়িকার ভেতরে এ জিনিস পাইনি।SHE IS EXTRA-ORDINARY. যাই হোক সেদিন আর শটটা নেওয়া যায় নি। পরদিন নেওয়া হয়েছিল।
কৃষ্ণকান্তের উইলে হরলালের চরিত্রে নাট্যকার ও অভিনেতা অসীম চক্রবর্তীকে প্রথমে নেওয়া হয়। সেই সময়ে’বারবধূ’ কলকাতায় রমরম করে চলছে। একদিন সুচিত্রা সেন ও দীনেনবাবু নাটকটা দেখতে গেলেন। কেউ যাতে তাঁকে চিনে না ফেলে সেজন্য শ্রীমতী সেন মাথায় ভাল করে ঘোমটা টেনে নেন। অসীম চক্রবর্তীর অভিনয় ভালো লাগে তাঁর।
দীনেনবাবুকে বললেন, ‘একেই নিন হরলালের চরিত্রে। খুব ভাল হবে।’ শ্রীমতি সেনের যখন পছন্দ দীনেনবাবু ও রাজি। তিনি অসীমবাবুর সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। সব ঠিকঠাক হয়ে গেল। কিন্তু ফ্লোরে এসে শুটিং করতে গিয়ে দেখলেন কখনও অসীমবাবু একটু ড্রিঙ্ক করে ফেলছেন, কখনও অভিনয় করতে করতে তিনি নার্ভাস হয়ে পড়ছেন।
একদিন শুটিংয়ের পর একরকম বাধ্য হয়েই অসীমবাবুকে বাদ দিয়ে হরলালের চরিত্রে
দিলীপ মুখার্জিকে আনলেন দীনেন গুপ্ত।অন্য কয়েকটি ভূমিকায় ছিলেন বসন্ত চৌধুরী, নির্মলকুমার, শেখর চট্টোপাধ্যায় প্রমূখ।
সুচিত্রা সেন রোহিনী চরিত্রটি নিয়ে খুব ভাবনা চিন্তা করতেন। কৃষ্ণকান্তের উইল তাঁর একটি প্রিয় উপন্যাস। কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার ছবিটি শেষ করতে পারেননি দীনেনবাবু। সেটি আজও ক্যান বন্দী হয়ে পড়ে আছে। আসলে কৃষ্ণকান্তের উইলের শুটিং চলাকালীন দীনেনবাবু ফেডারেশন থেকে হঠাৎ একটা চিঠি পেলেন কোন একজন প্রযোজক কিছুদিন আগে কৃষ্ণকান্তের উইলের মহরত করেছেন। তিনিই আইনত ছবিটি করার অধিকারী। অতএব দীনেন বাবুকে শুটিং বন্ধ করে দিতে হবে।
এরকম একটা চিঠি পেয়ে দীনেনবাবুর মাথায় বাজ পড়ল। তিনি কী করবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না। এদিকে সুচিত্রা সেনকেও কর্মী ইউনিয়ন থেকে চিঠি দেওয়া হল— আপনি যদি ওই ছবির শুটিং করতে যান তাহলে সব কলাকুশলীকে মাড়িয়ে আপনাকে মেকআপ রুমে যেতে হবে।
এরকম চিঠি পেয়ে শ্রীমতি সেনের খুব খারাপ লেগেছিল। তিনি দীনেন গুপ্তকে বললেন,
এইসব ঝামেলায় আমাকে জড়াবেন না দীনেনবাবু।এরপর কৃষ্ণকান্তের উইলের শুটিং বন্ধ হয়! বেশ কয়েক লক্ষ টাকাও খরচ ও হয়ে যায় !
Writer…সুমন গুপ্ত।