অমিতাভ কাঞ্চন ::
গান্ধিজী নাকি একটা অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য পাঁচ টাকা করে নিতেন।আর রবীন্দ্রনাথকে পইপই করে বলেও এক টাকার বেশি রাজি করাতে পারেননি গান্ধিজী।বলাই বাহুল্য সবটাই দেশ ও দশের জন্য।
তো ১০ বছরের ছেলেটি যখন অটোগ্রাফ খাতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের সামনে কাঁচুমাচু মুখ করে দাঁড়ালে, রবীন্দ্রনাথের বড্ড মায়া হল, তড়িঘড়ি করে ছেলেটির খাতায় স্বাক্ষর করে, চারদিক দেখে নিয়ে বললে, দেখিস কেউ যেন জানতে না পারে!
এই ছেলেটির সঙ্গেই আজ সারা দুপুর জমাটি আড্ডা দিলাম।তবে ঠিক আড্ডা নয়, আমার ভূমিকা শুধুই শ্রোতার।
কতশত গল্প। সারাদিন ধরে বললেও ফুরাবার নয়।ছেলেটির নাম রেখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।ছেলেটির বাবা হরেন্দ্রনাথের সঙ্গে কিছুটা মিল রেখে হৈমেন্দ্র।কিন্তু নামকরণের অনুষ্ঠানে নাম রাখা পাঁচটি প্রদীপের মধ্যে হৈমেন্দ্র নামের প্রদীপটিই প্রথমে নিভেছিল।তাই এই নামটি বাতিল করে সবচেয়ে বেশি জ্বলা ‘ভবেশ’ নামের প্রদীপটির নামে নামকরণ হল ভবেশ।অবশ্য পরে সেকেলে নাম বলে ভবেশ নামটিও বাতিল করে মাতামহ ক্ষিতিমোহন সেন নাম রাখলেন কল্যাণ।
আজ কল্যাণকুমার দাশগুপ্ত ঠাট্টা করে বলছিলেন, তিনিই বোধহয় একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর রবীন্দ্রনাথের দেওয়া নাম বাতিল করা হয়েছে!অবশ্য কল্যাণবাবুর বাকি চার দিদির নাম রবীন্দ্রনাথেরই দেওয়া।
কাকে না দেখেননি? গান্ধি, এন্ড্রুজ, অবনীন্দ্রনাথ, কালিমোহন ঘোষ থেকে শুরু করে ইন্দিরাদেবী, হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়, পুলীনবিহারী সেন ও রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর।অমর্ত্য সেন তো পিঠোপিঠি ভাই।দু’বছরেরর ছোটো।
আসলে যে মূল কথাটা বারবার বলছিলেন তা ক্ষিতিমোহন সেনের শিক্ষা ও রুচির সমগ্রতা।কোনওদিন দেখেননি দাদু কে পায়ে না হেঁটে বোলপুর থেকে শান্তিনিকেতন ফিরতে।দিদিমা কিরণবালার প্রশংসাতেও পঞ্চমুখ কল্যাণবাবু।
রবীন্দ্রনাথকে ক্ষিতিমোহন গুরুদেব বলুক চাননি কবি, বন্ধু হিসেবেই চেয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথের প্রকৃত প্রস্তাবে তো কোনও বন্ধু ছিল না, কিন্তু ক্ষিতিমোহন শেষদিন অবধি গুরুদেব নামেই সম্বোধন করেছেন।
ক্ষিতিমোহন সেনের বড়ো মেয়ে রেণু দাশগুপ্তর পুত্র এই কল্যাণকুমার দাশগুপ্ত।রেণু দাশগুপ্তর ছোটো বোন অমিতা সেনের ছেলে অমর্ত্য।অমর্ত্য সেনের আত্মজীবনী পড়ার সঙ্গে এ যেন এক বড়ো প্রাপ্তি।
সবথেকে বড়ো কথা কল্যাণবাবুর মেয়ে আমাদের প্রতিবেশী। কল্যাণবাবুর বিশাল লাইব্রেরি দেখা বাকি, দেখা বাকি রবীন্দ্রনাথের অপ্রকাশিত চিঠি ও কবিতাও।
এমন দিন সহসা উদয় হয় না, যখন হয়, সবকিছু যেন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় বদলে দেয়।আমি শুধু একবার কল্যাণবাবুর আঙুলগুলো ছুঁলাম কেননা এই আঙুল রবীন্দ্রনাথকে ছুঁয়েছিল!
সৌজন্যে গৌতম মিত্র।