নিজস্ব প্রতিবেদক ::
আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন যুক্তরাজ্যের মতো অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে সবার সহযোগিতা কামনা করছেন তিনি। গতকাল শনিবার (৬ মে) লন্ডনে ক্লারিজ হোটেলের সভাকক্ষে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি ও তার স্ত্রী সুজানা স্পার্কসের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ সহযোগিতা চান।
প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। আমার দল সবসময় দেশে গণতন্ত্র বজায় রেখেছে। আমরা দেশের গণতন্ত্রকে একটি শক্তিশালী ভিত্তি দিয়েছি।’
বৈঠক শেষে হোটেলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে কথা বলেন। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আমি সবার সহযোগিতা চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করেছে, কেউ যাতে নির্বাচনে কারচুপি করতে না পারে সেজন্য ছবিসহ ভোটার তালিকা ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট স্বাধীন ও শক্তিশালী করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তারা ওয়েস্টমিনিস্টারের আদলে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, যার অনুসরণে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্ব চালু করেছে।
মোমেন বলেন, বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও জলবায়ু, ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো বেশকিছু দ্বিপাক্ষিক বিষয় আলোচনায় এসেছে। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মানবিক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে ব্রিটেন বাংলাদেশের পাশে থাকবে। ব্রিটিশ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে একটি বিল তুলেছে এবং রেজুলেশন পাস করতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডনে এলে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। এর পর থেকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
জেমস ক্লিভারলি বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হয়েছে এবং দিন যতই এগিয়ে আসছে এ সম্পর্ক ততই জোরদার হচ্ছে।’ তিনি শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং স্মরণ করেন যে রানী সর্বদা তার এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানার খোঁজ-খবর নিতেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, কমনওয়েলথ লিডারস ইভেন্টের সময় শেখ হাসিনা রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। রাজাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী এবং রাজা ইতিবাচক সাড়া দেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম প্রমুখ অন্যান্যের মধ্যে ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।