ফিলিং স্টেশনেই রিফিল হচ্ছে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার – দৈনিক মুক্ত বাংলা
ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১১ মে ২০২৩
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি-ব্যবসা
  3. আইন ও আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আরও
  6. ইসলাম ও ধর্ম
  7. কোভিট-১৯
  8. ক্যারিয়ার
  9. খেলা
  10. জেলার খবর
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. বিনোদন
  13. মি‌ডিয়া
  14. মু‌ক্তিযুদ্ধ
  15. যোগা‌যোগ
 
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ফিলিং স্টেশনেই রিফিল হচ্ছে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার

সম্পাদক
মে ১১, ২০২৩ ৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সা‌লেহা খাতুন ::

দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহার করা হয় মূলত বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে। তবে বিকল্প ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে ব্যক্তিগত গাড়িতেও এর ব্যবহার বাড়ছে। সারা দেশে ফিলিং স্টেশনগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এলপিজি অপারেটররা অটোগ্যাসের ব্যবসা করছেন। তবে সেই গ্যাস উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ভরা (ক্রস ফিলিং) হচ্ছে ফিলিং স্টেশনেই। অধিক মুনাফার আশায় অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন অবৈধ এ ব্যবসায়। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটতে পারে। কারণ রিফিল সংমিশ্রণ সঠিকভাবে না হলে গ্যাস সিলিন্ডারের নিচে বসে থাকে। নাড়াচাড়ার কারণে মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। এলপিজি অপারেটরদের সংগঠনের পক্ষ থেকে তাই বিষয়টি তদারকির জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবৈধভাবে অটোগ্যাস সিস্টেম প্রতিস্থাপন করে রাজধানী ঢাকা ও মফস্ফল শহরের বেশকিছু ফিলিং স্টেশনে রিফিল করা হচ্ছে রান্নার কাজে ব্যবহূত গ্যাস সিলিন্ডার। বিশেষত রাতের বেলায় এবং দিনের একটি সময়ে ফিলিং স্টেশনগুলো স্থানীয় এলপিজির খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডার ক্রস ফিলিং করে। এমন বেশকিছু ভিডিওচিত্র বণিক বার্তার হাতে এসেছে। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, পেট্রলপাম্পের ফুয়েল ডিসপেন্সিংয়ের পাশেই মাটিতে সিলিন্ডার বসিয়ে খালি হাতেই করা হচ্ছে ক্রস ফিলিং। কখনো ভ্যানগাড়িতে অনেকগুলো সিলিন্ডার একসঙ্গে বসিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সেই কাজ চলছে। কোনো ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া দক্ষ নন এমন কর্মীরাই এ ধরনের কাজ করছেন। এর মধ্যে কুষ্টিয়া, পাবনা, ঝিনাইদহ, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে এ ধরনের অবৈধ ক্রস ফিলিং বেশি হচ্ছে।

এলপিজি ক্রস ফিলিংয়ের বিষয়টি অবশ্য নতুন নয়। সারা দেশে ফিলিং স্টেশনগুলোয় অটোগ্যাস স্থাপন শুরু হওয়ার পর পরই বেশকিছুর বিরুদ্ধে এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রমের অভিযোগ পান এলপিজি অপারেটর। ক্রমেই এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিষয়টি জানিয়ে বিস্ফোরক পরিদপ্তরেও চিঠি দেয় বেশ কয়েকটি এলপিজি অপারেটর। তবে এ বিষয়ে খুব বেশি তত্পরতা না থাকায় এক প্রকার বলে-কয়েই ক্রস ফিলিংয়ের কাজটি করছে ফিলিং স্টেশনগুলো।

অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলপিজি সিলিন্ডার খালি হওয়ার পর তা নির্ধারিত কোম্পানির পরিবেশকদের মাধ্যমে রিফিল স্টেশনে পাঠানো হয়। যেখানে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত রয়েছে। খালি সিলিন্ডারে ছিদ্র বা ক্ষয় রয়েছে কিনা তা কারখানায় নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, পরীক্ষা করা হয় সিলিন্ডারের মান। এরপর পুনরায় তাতে গ্যাস ভর্তি করা হয়।

সিলিন্ডার খালি হওয়ার পরও কারখানায় না পাঠিয়ে কেন ফিলিং স্টেশনগুলোয় নিয়ে রিফিল করা হচ্ছে—জানতে চাইলে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এ খাতের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘এলপিজির বিদ্যমান বাজার অনুযায়ী খুচরা বিক্রেতারা একটি সিলিন্ডারে ৪০-৫০ টাকার বেশি লাভ করতে পারেন না। সিলিন্ডার বাসাবাড়িতে পৌঁছে দিলে সেই মুনাফা আরো কমে আসে। সেক্ষেত্রে নিকটস্থ একটি অটোগ্যাস স্টেশন থেকে ক্রস ফিলিং করালে লিটারের হিসাবে গ্যাসের দামটাও কম পড়ে। এতে প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডারে খুচরা বিক্রেতারা ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করে থাকেন। অন্যদিকে ফিলিং স্টেশন মালিকদের লাভের পরিমাণ আরো বেশি, ৪০০-৫০০ টাকা। মূলত বড় মুনাফার লোভেই এ ঝুঁকি নিচ্ছে দুই পক্ষই।’

বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হয় কেজিতে। অন্যদিকে গাড়ির অটোগ্যাস বিক্রি হয় লিটারে। অটোগ্যাস স্টেশন থেকে এলপিজি সিলিন্ডারও ভর্তি হয় লিটারে। ফলে লিটার ও কেজির তারতম্য থাকায় প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তা। দেশে এলপিজির মূল্য নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। প্রতি মাসে আন্তর্জাতিক মূল্যের হিসাব বিবেচনায় নিয়ে দেশের বাজারে গ্যাসের দাম নির্ধারিত হয়। চলতি মে মাসে খুচরা পর্যায়ে (মূসকসহ) বেসরকারিভাবে সরবরাহকৃত এলপিজির প্রতি কেজির দাম ১০২ টাকা ৯১ পয়সা। অন্যদিকে প্রতি লিটার অটোগ্যাসের দাম মূসকসহ ৫৭ টাকা ৫২ পয়সা।

অপারেটরদের কাছ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিইআরসি ঘোষিত দামে এলপিজি কেনেন। অন্যদিকে পরিমাণে কিছুটা কম হলেও ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস পাওয়া যায় অর্ধেক মূল্যে। অন্যদিকে সিলিন্ডারে গ্যাস পরিমাপের কোনো সুযোগ না থাকায় গ্রাহক সেটিই কিনছেন। তবে এভাবে সিলিন্ডার ক্রস ফিলিংয়ে ব্যবসায়িক ক্ষতির পাশাপাশি মারাত্মক ঝুঁকি দেখছেন অপারেটররা।

দেশের বাজারে এলপি গ্যাসের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী বসুন্ধরা এলপিজি। কোম্পানিটির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) এমএম জসিম উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সিলিন্ডার ক্রস ফিলিংয়ের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। এটি তদারকির জন্য এলপিজি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি নজরদারি করছে। এছাড়া আমরা আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। এ ধরনের কার্যক্রমে কোনো ফিলিং স্টেশন জড়িত থাকলে তাদের জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

এলপিজি সিলিন্ডার ক্রস ফিলিং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের কাজে গ্রাহকরা যেমন প্রতারিত হচ্ছেন, তেমনি ফিলিং স্টেশনগুলোয় রয়েছে বিস্ফোরণের তীব্র ঝুঁকি। এলপিজি বিধিমালা, ২০০৪-এর ১০৮ বিধি অনুযায়ী, স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিনের জ্বালানি সরবরাহের কাজে নিয়োজিত এলপিজি বিতরণ স্টেশন (ডিসপেন্সিং স্টেশন) থেকে মোটরযানে বা অন্য কোনো স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিনের সঙ্গে সংযুক্ত জ্বালানি ধারণপাত্র ব্যতীত অন্য কোনো বহনযোগ্য পাত্রে এলপিজি ভর্তি করা যাবে না। যদি এ ধরনের বেআইনি কাজে কেউ জড়িত থাকে, তা এলপিজি বিধিমালা অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।

জি-গ্যাস এলপিজির চিফ বিজনেস অফিসার (সিবিও) আবু সাঈদ রাজা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এলপিজি এখন অটোগ্যাস হিসেবে গাড়িতে ব্যবহার হচ্ছে এবং এটি জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে অত্যন্ত শঙ্কার বিষয় হলো এখন অবৈধ উপায়ে এলপিজি সিলিন্ডারে ক্রস ফিলিং। এটি ব্যাপক হারে বাড়ছে, যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের অবৈধ ক্রস ফিলিংয়ের কারণে এ খাতের নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে এখনই নিয়ন্ত্রক সংস্থার জোরালো অবস্থান নেয়া প্রয়োজন। আমরা বিস্ফোরক পরিদপ্তরে চিঠিও দিয়েছি। এটা বন্ধ করা দরকার।’

দেশে ব্যবহার বাড়াতে এলপিজি অপারেটর বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনগুলোয় চুক্তিবদ্ধ হয়ে অটোগ্যাসের ব্যবসা করছেন। এখন পর্যন্ত ১৩-১৪টি প্রতিষ্ঠান সারা দেশে ৬০০-এর অধিক অটোগ্যাস স্টেশনের নিবন্ধন পেয়েছে। অপারেটররা এলপিজির রোড ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে এসব স্টেশনে অটোগ্যাস সরবরাহ করছে। তবে লাইসেন্স ছাড়া বহনযোগ্য সিলিন্ডারে গ্যাস বিক্রি করলে সংশ্লিষ্ট ফিলিং স্টেশন ও মালিকের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মোহা. নায়েব আলীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।