রাজনৈতিক প্রতিবেদক ::
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) সাবেক মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগের থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান এ তথ্য জানান। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ সংগঠনের গঠনতন্ত্রের বিধি মোতাবেক গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
জাহাঙ্গীর আলম এর আগেও একবার বহিষ্কার হয়েছিলেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নিজ জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে নিয়ে গাজীপুর সিটির তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জেরে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ১৭(৬) এবং ৪৭(২) ধারা অনুযায়ী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কাছে সাধারণ ক্ষমা চান জাহাঙ্গীর।
একই সঙ্গে ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার অঙ্গীকার করেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ।
তবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন জাহাঙ্গীর। তিনি নিজে ও মায়ের নামে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। তার নিজের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর প্রার্থিতা ফিরে পেতে তিনি দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ করেন। যদিও প্রার্থিতা ফিরে পাননি তিনি।
গাজীপুর সিটি ভোটে মেয়র পদে নিজের প্রার্থিতা ফিরে না পেলেও থেমে নেই সাবেক এই মেয়র। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তা মা। আর মায়ের পক্ষে ভোটের মাঠে সরব থেকে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তিনি।
এদিকে দল থেকে একবার বহিষ্কার হওয়ার পর শর্তসাপেক্ষে দলে ফিরেও জাহাঙ্গীর আলমের এমন ভূমিকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্র্রে তার শক্ত খুঁটি থাকার গুঞ্জন ওঠে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ইন্ধনে জাহাঙ্গীর আলম এতোটা বেপরোয়া কী না- এমন প্রশ্ন তোলেন দলটির গাজীপুর জেলার নেতারা।
গাসিক নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে গাজীপুর আওয়ামী লীগ নেতাদের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে প্রশ্নটি উত্থাপন হয় বলে জানান একাধিক নেতা।
২ মে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নিউজবাংলাকে জানান, গাজীপুরের নেতারা জাহাঙ্গীরের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেও সদুত্তর পাননি।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতার বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। তারা বলেন, দল দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খানকে প্রার্থী করেছে, কিন্তু জাহাঙ্গীর এবং তার মা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতার একজনকে উদ্ধৃত করে দলটির দায়িত্বশীল এক নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিনি (জাহাঙ্গীর) ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিষেধ করলে তিনি নির্বাচন করবেন না। কিন্তু কেন্দ্র থেকে এখনও কেউ কি তাকে কোনো বার্তা দিয়েছেন? কেন্দ্র থেকে তাকে ডেকে এখনও কোনো আলোচনা করা হলো না কেন?
‘তা ছাড়া জাহাঙ্গীর নানা ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলছেন। ২০১৩ সালে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। তখনও তাকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ ইন্ধন দিয়েছিলেন। এবারও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। এবারও কি তাকে কেন্দ্র থেকে কেউ ইন্ধন দিচ্ছে?’
গাজীপুর আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্ধৃত করে মঙ্গলবারের বৈঠকে অংশ নেয়া এক নেতা জানান, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন জাহাঙ্গীর, যা তার ক্ষমা চাওয়ার লিখিত অঙ্গীকারের পরিপন্থী। এ অবস্থায় তাকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা প্রয়োজন।
শেষ পর্যন্ত গাজীপুরের এই প্রভাবশালী নেতাকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।