রম্য প্রতিবেদক ::
সলমন খানকে আজীবন সদস্যপদ দিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। কেন দিল, আমার জানা নেই। ইস্টবেঙ্গলের প্রতি বা জাতির প্রতি এই অভিনেতার কী অবদান, তা-ও আমি জানি না। ইস্টবেঙ্গল হেরে গেলে ওঁর কি আমাদের মতো সব কিছু অন্ধকার লাগে? নিশ্চয় না। ইস্টবেঙ্গল জিতলে ওঁর কি আমাদের মতো সন্তানলাভের আনন্দ হয়? নিশ্চয় না। তবু উনি আজীবন সদস্য।
শুনেছি ইস্টবেঙ্গলের এক কর্তা যৌবনে সিনেমার টিকিট ব্ল্যাক করতেন। তখন থেকেই বোধহয় সলমনের সুরমা ওঁর চোখে লেগে আছে। সলমন নিশ্চয় এই অনুষ্ঠান করতে বিপুল টাকা নিয়েছেন। তা নিন। ওঁর প্রাপ্য উনি বুঝে নেবেন এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু সমর্থকদের কী হবে? তাঁদের প্রাপ্তি হার হার এবং হার। ভালো দল গড়ার কোনও লক্ষণ নেই। কিন্তু ফুর্তিফার্তা আছে ষোলো আনা। দিন কয়েক আগে ক্লাবে পানশালার উদ্বোধন হয়েছে। এর পর হয়তো ফি সন্ধ্যায় বাইজি নাচের আসর বসবে। দাদরা-ঠুংরির নূপুরনিক্কণে গমগম করবে শতাব্দী-প্রাচীন ক্লাব।
এটা ঠিক, পৃথিবীর বহু ক্লাবে পানশালা আছে। কিন্তু সেই ক্লাব আর ইস্টবেঙ্গল ক্লাব এক নয়। আমি শুধু বিদেশি ক্লাবের কাছ থেকে পানশালার প্রেরণা নিলাম, আর বাকিটা কলকেতার মতোই থেকে গেল—এককথায় অট্টহাস্যকর।
আমাদের পাড়ায় এক বরিশালের ভদ্রলোক থাকতেন। ইস্টবেঙ্গল হেরে গেলে তিনি তেরাত্তির জলগ্রহণ করতেন না। তখন অবশ্য ইস্টবেঙ্গল হারত কম। ফলে জয়ের আনন্দে জোড়া ইলিশ ছিল বাঁধা। বড় ম্যাচ থাকলে বলতেন, ‘পারবি বাবা একটা টিকিট জোগাড় করে দিতে? একটা হলেই হবে।’ একটা টিকিট তাঁর হাতে দিলে তিনি সেই টিকিটের গায়ে দ্যাশের বাড়ির উঠোন দেখতে পেতেন। ফেলে আসা হাঁস-মুরগি-কুকুর-বিড়ালের ডাক অবিরাম বাজত তাঁর কানের কাছে। তিনি কিন্তু আজীবন সদস্য ছিলেন না। এমনকী সাধারণ সদস্যও নন। তাতে কী! তাঁর বুকে পূর্ববঙ্গের কোনও এক নাম না-জানা নদীর ঢেউয়ের শব্দ শোনা যেত। সলমনের বুকে শোনা যায়?
না যায় না। শোনার কথাও নয়। কর্তারা যা খুশি করুন। আজ সলমন, কাল মাধুরী, যাকে খুশি আনুন। তবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে নয়। পাড়ার ‘ভাই ভাই সঙ্ঘ’ তো আছে এখনও। নাকি?
✒️ অনিমেষ বৈশ্য