নিজস্ব প্রতিবেদক ::
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন ইস্যুতে ডিম ছোড়াছুড়ির পর ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণ। বর্তমান কমিটি বাতিল করে নতুন করে ভোটগ্রহণের দাবিতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভের সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি, হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় সমিতির সম্পাদকের কক্ষের দরজা-জানালার গ্লাস ভাংচুর করেন আইনজীবীরা।
আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের দাবি, বিএনপির আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে ওই দলের আইনজীবীরা সমিতির সম্পাদকের দরজা ও জানালার গ্লাস ভেঙে অনেককেই আহত করেছেন।
অন্যদিকে বিএনপির দাবি, তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ বাহিনী অতর্কিত হামলা করে তাদের অনেককেই আহত করেছে। এজন্য তারা নতুন করে বৃহস্পতিবার ফের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা মিছিল করতে করতে মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে বিএনপির মিছিলের মধ্য থেকে কয়েকজন সমিতির সম্পাদকের কক্ষের দরজা ও জানালার গ্লাস ভাঙচুর করেন। তখন সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল তার কক্ষে অবস্থান করছিলেন।
এক পর্যায়ে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ সময় দুইপক্ষের অনেক আইনজীবী আহত হন। বেলা সোয়া ১টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত কয়েক শ আইনজীবী ধাক্কাধাক্কি এবং স্লোগান পাল্টা স্লোগান দিতে থাকে।
পরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে এলে বিএনপির আইনজীবীরা দ্বিতীয় তলা থেকে নেমে নিচতলায় চলে যান। সেখানে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন আইনজীবী আহত হয়েছেন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আইনজীবীরা চড়াও হয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। তারা পায়ে পাড়া দিয়ে আমাদের সঙ্গে ঝগড়া বাঁধানোর চেষ্টা করছে। আমরা সব সময় সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছি। অথচ প্রতিদিন তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে। আমাদের নারী আইনজীবীসহ অনেকেই আহত হয়েছেন। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে যা যা আইনি পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তার সবই করব গণতান্ত্রিক পন্থায়।
বিএনপির মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে বলেও দাবি করেন আবদুন নূর দুলাল।
অন্যদিকে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের নির্দেশে পোশাকধারী পুলিশ বাহিনী আমাদের আইনজীবীদের ওপর হামলা করেছিল। আজকেও পোশাকধারী পুলিশ বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের যৌথ হামলায় আমার ভাই কাইয়ুম আহত হয়েছেন। আরও অনেক আইনজীবী আহত হয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে কার অনুমতি নিয়ে পুলিশ বাহিনী ঢুকেছে, প্রধান বিচারপতির কাছে সেই প্রশ্ন রেখে বিএনপির এ আইনজীবী বলেন, যারা আইনজীবীদের কালো কোট রক্তাক্ত করেছে, তারা আওয়ামী সন্ত্রাসী আইনজীবী ও পুলিশ বাহিনী।
আগামী বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় আবারও বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন তিনি।
আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের দাবি, এ ঘটনায় তাদের আইনজীবী রিনা বেগম, নজরুল ইসলাম প্রামাণিক, আকলিমা বেগমসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। আর বিএনপির দাবি, তাদের আইনজীবী কাইয়ুম, নুরে আলম সোহাগ, ফয়সাল সিদ্দিকীসহ অনেকেই আহত হয়েছেন।
গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে এবং নতুন নির্বাচনের দাবিতে বেশ কিছু দিন থেকে বিক্ষোভ করে আসছে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরাও সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে পাল্টা বিক্ষোভ করছেন।
এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ডিম ছোড়াছুড়ি এবং হামলা-মামলার ঘটনাও ঘটেছে। মাঝে রোজা ও ঈদের ছুটি যাওয়ার পর আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল সমিতি প্রাঙ্গণ।