নিজস্ব প্রতিবেদক ::
গণতন্ত্র ও আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের পথে বাধাদানকারী কাউকে ভিসা না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে গতকালই বাংলাদেশের জন্য নতুন এক ভিসা নীতির ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের মুখপাত্রের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিংকেন। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন উৎসাহিত করতে নতুন এ ভিসা নীতির ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যকে সহায়তা করতে, আমি ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ধারা ২১২(এ)(থ্রি)(সি)(‘‘থ্রিসি’’)-এর অধীনে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এ নীতির অধীনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে পরিগণিত যেকোনো বাংলাদেশী ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।’
বিবৃতিতে ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে’ এমন যেসব বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।
ব্লিংকেন আরো বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ সবার। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সবার প্রতি আমাদের সমর্থন হিসেবে আমি এ নীতি ঘোষণা করছি।’
এর আগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাত কর্মকর্তার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর। দেশটির ম্যাগনিৎস্কি আইনের অধীনে এটিই ছিল প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর সরকারের এক নির্বাহী আদেশের (নম্বর ১৩৮১৮) আওতায় এ বিধিনিষেধ দেয়। ওই আদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত ব্যক্তির সম্পদ বাজেয়াপ্তের কথাও বলা হয়।
এদিকে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে সরকার ‘বিচলিত নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গতকাল রাতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এটা কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। এতে সরকার বিচলিত নয়। যেহেতু আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বরং বিএনপির দুশ্চিন্তা করা উচিত। কেননা ভিসা বিধিনিষেধের আরেকটি মানদণ্ড হিসেবে নির্বাচনের আগে বা পরে সংঘাতের কথা বলা রয়েছে।’