চট্টগ্রামে বাংলাদেশ রোড ট্র্যান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) অফিসে আটকে রেখে এক গাড়ি মালিককে মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে খালী স্ট্যাম্প এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ ওই অফিসের উপপরিচালক ও এক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল ১ এর উপপরিচালক মো. তৌহিদুল হোসেন ও অফিস সহকারী মো. জামাল উদ্দীনের নাম উল্লেখ করে গত ৬ জুন জেলা প্রশাসকের বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্যাতিত সেবাপ্রার্থী মো. রিয়াজ (৩৮)। সে নগরীর খুলশী থানার ঝাউতলা এলাকার ছামাদ হাসানের পুত্র এবং চট্টমেট্রো-থ-১২- ৫৪৮২ অটোরিক্সার মালিক।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, একটি টিভিএস অটোরিক্সাকে বাজাজ ব্র্যান্ডে রূপান্তরিত করার জন্য প্রতিপক্ষের সাথে মৌখিক চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী টাকা গ্রহণ করেও কাজ না করায় দরখাস্তকারী গত ৩০ এপ্রিল বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকের বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য প্রতিপক্ষগণ দরখাস্তকারীকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি প্রদান করেন। পরে গত ২৩ মে দৈনিক আজাদীর পত্রিকায় মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস/ পেট্রোলচালিত ৪ স্ট্রোক থ্রি হুইলার অটোরিক্সা প্রতিস্থাপনের নিমিত্তে ক্র্যাপ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মে দরখাস্তকারীর মালিকানাধীন (চট্টমেট্রো-থ-১২-৫০৬০) পুরাতন অটোরিক্সাটি স্ক্র্যাপ করার উদ্দেশ্যে সকাল ১০ টায়ায় বিআরটিএ কার্যালয় নিয়ে যায়। বিআরটিএ’র নিয়ম অনুযায়ী সিরিয়ালে দাঁড় করালে স্ক্র্যাপ সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র দেখানো স্বত্ত্বেও স্ক্র্যাপ কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা তৌহিদুল হোসেন দরখাস্তকারীর গাড়ী স্ক্র্যাপ করেনি। দুইজন মালিক আছে বলে মিথ্যা অজুহাতে সিরিয়াল থেকে বের করে দেয়। পরে তাদের নিয়োজিত দালাল চক্র গাড়ীটি বিআরটিএ’র প্রধান ফটক থেকে বের করে দেয়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর রফিকুল ইসলাম নামের দালাল চক্রের এক সদস্য দরখাস্তকারীকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে। সন্ধ্যা ৬ টায় রফিক দরখাস্তকারীর সাথে উক্ত গাড়ীটি স্ক্র্যাপ করার জন্য ৭ লাখ টাকার মৌখিক চুক্তিতে গাড়ীটি রাত ৮ টায় স্ক্র্যাপ করা হয়েছে। কিন্তু গাড়ির প্রকৃত মালিক (দরখাস্তকারী) স্লীপ (স্ক্র্যাপ ডকুমেন্টস) চাইলে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দরখাস্তকারীর দায়েরকৃত অভিযোগ প্রত্যাহার করিতে বলে। যেহেতু ৭ লাখ টাকার মৌখিক চুক্তিতে গাড়ীটি স্ক্র্যাপ করেছেন তাই অভিযোগ প্রত্যাহার করিতে অস্বীকার করিলে ২নং প্রতিপক্ষ (জামাল উদ্দীন) কর্তব্যরত পুলিশের সহযোগিতায় দরখাস্তকারীকে হাত কড়া পড়িয়ে জোর পূর্বক টানা হেছড়া করে ১নং প্রতিপক্ষের তৌহিদুল হোসেন) ৩য় তলায় তাহার রুমে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। অনেকক্ষণ আটক রেখে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে দরখাস্তকারীর নিকট হইতে ৫ টি ১০০ টাকা মূল্যমানের নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের শিরোভাগে ও ৪টি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। উক্ত স্ট্যাম্পে দরখাস্তকারী স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর করিয়াছে হুমকি প্রদর্শন পূর্বক মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। দরখাস্তকারী উক্ত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিতে অপারগতা প্রকাশ করিলে পার্শ্বেলিখিত ব্যক্তি দরখাস্তকারীকে মেরে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি প্রদান করে। দরখাস্তকারী নিরুপায় হয়ে আত্মরক্ষার জন্য উল্লেখিত স্টাম্প ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেন।
অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে দরখাস্তকারী মো. রিয়াজ বলেন, আমাকে মারধর করে ও হত্যা করে লাশ গুম করার কথা বলায় আমি প্রাণভয়ে খালী স্ট্যাম্প ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে প্রাণে বেঁচে যাই। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। এসব ব্যপারে আদালতে মামলা করতে গেলে মামলা গ্রহণ করেনি। তাই বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসকের বরাবরে অভিযোগ দিয়েছি। যাতে স্ট্যাম্প ও সাদা কাগজগুলো উদ্ধার করা যায়। এসব কাগজের অপব্যবহার করে আমার যাতে কোন ক্ষতি করতে না পারে।
এব্যপারে বাংলাদেশ রোড ট্র্যান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (ইঞ্জি.) মো. শফিকুজ্জামান ভুঁঞা বলেন, বিআরটিএ’র মেট্রো সার্কেল ১ এর উপপরিচালক তৌহিদুল হোসেন ও অফিস সহকারী জামাল উদ্দীনের নামে একটি লিখিত অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি। এব্যপারে খুব শীঘ্রই একটি তদন্ত কমিটি করে দিব। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগ সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে জানতে বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল ১ এর উপপরিচালক তৌহিদুল হোসেনকে মোবাইলে কল ও ক্ষুদেবার্তা দিয়েও কোন সাড়া না পাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।