গুরু আজম খান হ‌লেন যেভা‌বে – দৈনিক মুক্ত বাংলা
ঢাকাসোমবার , ৫ জুন ২০২৩
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি-ব্যবসা
  3. আইন ও আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আরও
  6. ইসলাম ও ধর্ম
  7. কোভিট-১৯
  8. ক্যারিয়ার
  9. খেলা
  10. জেলার খবর
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. বিনোদন
  13. মি‌ডিয়া
  14. মু‌ক্তিযুদ্ধ
  15. যোগা‌যোগ

গুরু আজম খান হ‌লেন যেভা‌বে

সম্পাদক
জুন ৫, ২০২৩ ৪:৩৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ডিএস মাহফুজা হো‌সেন মিতা ::

তখন বয়স আর কতো হবে, বড়জোর সতেরো। নবম শ্রেণী পড়ুয়া সেই কিশোর সদ্য পদার্পণ করেছে দশম শ্রেণীতে। পরের বছরই ম্যাট্রিক পরীক্ষা। আর তাতেই বাড়ির লোকেদের পড়তে বসার জন্য নিত্য হট্টগোল।
.
কিন্তু এরই মধ্যেই পাক্কা সেয়ানা হয়ে উঠেছে সে। শিক্ষকদের চোখে সে বনে গেছে স্কুল ফাঁকি দেয়ার ওস্তাদ। তবে সে একাই নয়, ক্রমশ সেই ব্যাধি সে সংক্রামিত করেছে সহপাঠীদের মাঝেও।
.
ফেব্রুয়ারি মাসের একদিনের ঘটনা। দুই সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে সেদিন স্কুলে না গিয়ে সেই কিশোর গিয়ে জুড়লো পল্টন ময়দানে। পল্টন ময়দানে তখন চলছিল ‘ক্রান্তি’ নামের নতুন এক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ভীষণ আগ্রহে চুপচাপ একপাশে গিয়ে সটান দাঁড়িয়ে পড়লো সে। এমন সময়েই মঞ্চ থেকে সমবেত শিল্পীরা গাইতে লাগলো ‘ধানের গুচ্ছে রক্ত জমেছে’। তখনই সে কিশোর মঞ্চে আবিস্কার করলো শিল্পী আলতাফ মাহমুদকেও।
.
মুহূর্তেই পাক্কা ডানপিটে সেই কিশোরের শরীরে খেলে গেল কি এক অজানা শিহরণ। তাঁর মনন জুড়ে তখন একটাই চাওয়া। যে করেই হোক জুটতে হবে এখানটায়। পরদিন আবারো স্কুল ফাঁকি দিয়ে পল্টন ময়দানে হাজির হলো সে। মঞ্চে তখন চলছে নৃত্যনাট্য ‘জ্বলছে আগুন ক্ষেতে ও খামারে’। বছর সতেরোর সেই তরুণ সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলো। এখানেই জুড়বে সে।
.
সে যাই হোক। এমনি করেই বছর পেরিয়ে গেল। সালটা ১৯৬৮। পরিবারের চাপে পড়ে কোনক্রমে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েই নিখাদ এক প্রশান্তি। অপেক্ষা না করেই ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর অফিসে ছুটে এসেই আসার কারণ সোজাসুজি বলে দিলো সে।
.
ক্রান্তির কার্যালয়ে তখন উপস্থিত আলতাফ মাহমুদ। সেই কিশোরের অধীর আগ্রহ দেখে বললেন, ‘গান গাইতে পারো?’ -কিছুটা পারি। ঠিক আছে গাও তবে। মুহূর্তেই কিশোর লাগলো, ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।‘ শুনেই মুগ্ধ হলেন আলতাফ মাহমুদ; বুঝলেন একে দিয়ে চলবে। এভাবেই সঙ্গীতের সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হয়েছিলেন সেদিনের কিশোর আজম খান।
.
বহু বছর পর সেসব দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আজম খান বলেছিলেন, ‘কত জেলায় জেলায় ঘুরেছি তখন। গান করেছি। আবার পুলিশের তাড়া খেয়ে দৌড়ও দিছি। তার পরেও পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে গান করা থামাই নাই।‘
.
দুয়ারে তখন মুক্তিযুদ্ধ। ২৫শে মার্চের কালরাত। পৈত্রিক বাড়ি কমলাপুরে তখন আজম খান। সবার মধ্যে তখন রুদ্ধশ্বাস। আজম খান পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে এলাকার সামনে ব্যারিকেড তৈরি করলেন। বাঁশ লাঠি যাই আছে তাই নিয়ে যেভাবেই হোক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
.
কিন্তু পাকিস্তানিদের ভারী অস্ত্রের সামনে সেই প্রতিরোধ কতক্ষণই বা টিকে। আজম খান পরবর্তীতে সেই স্মৃতি মনে করতে গিয়ে হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘অস্ত্র যোগাড় করছিলাম, মিলিটারি ঠেকাব তাই। কিন্তু তখন কী আর জানতাম পাকিস্তানি মিলিটারি ট্যাঙ্ক নামাবে। রাতের বেলা শুরু হলো গোলাগুলি। ব্যারিকেড কোথায় উড়ে গেল।’
.
তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে ততোদিনে। এমন সময় তরুণ যুবকদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যেত পাকিস্তানি বাহিনী। পাকিস্তানি বাহিনী বাড়ির কাছাকাছি আসতেই বাড়ির পাঁচিল টপকে পালাতেন আজম খান। এভাবে কয়েক মাস চলার পর তাঁর মনে হলো, লুকোচুরি খেলে এভাবে আর কতোদিন থাকবেন তিনি, তার চেয়ে যুদ্ধে যাওয়ায় ভালো। ইতিমধ্যেই তাঁর বেশ কয়েকজন বন্ধু যুদ্ধে চলে গেছে। ডানপিটে আজম খান মাকে গিয়ে বললেন, ‘মা আমি যুদ্ধে যাবো।’ জবাবে মা বললেন, ‘আমি জানিনা, তোর বাপকে জিজ্ঞেস কর।’
.
আজম খানের বাবা আফতাব উদ্দিন খান ছিলেন সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ভীষণ রাশভারী এই মানুষটির কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার কথা ভাবতেই গলা শুঁকিয়ে এলো আজম খানের। যদি শুনেই চড় বসায় বাবা। কিন্তু কিছু তো একটা করতেই হবে এটি ভেবে বাবার সামনে দাঁড়িয়েই ‘বাবা আমি যুদ্ধে যেতে চাই’ বলে ফেললেন আজম খান।

.
শুনেই বাবা কিছুক্ষন ডানপিটে ছেলের দিকে তাকিয়ে গলা চড়িয়ে কেবল একটা কথাই বললেন, ‘যুদ্ধে যাচ্ছিস ভালো কথা, কিন্তু দেশ স্বাধীন না করে ফিরতে পারবি না।’
.
দেরী না করে পরদিন ভোরে তিন বন্ধুকে নিয়ে পায়ে হেঁটে সীমান্তের উদ্দেশ্যে যাত্রা। পুবাইল, কালিগঞ্জ, ঘোড়াশাল, নরসিংদী, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে টানা দুদিন হাঁটার পরে অগত্যা আগরতলা পৌঁছানো। মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য আগ্রহী তরুণদের প্রশিক্ষণের জন্য মেলাঘরে খোলা হয়েছিলো প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। মেলাঘর পৌঁছাতেই পুরনো কয়েকজন বন্ধুবান্ধব তাঁকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরলেন।
.
সেখানেই আজম খানের প্রথম পরিচয় হলো শাফী ইমাম রুমির সঙ্গে। খুব দ্রুতই দুজনের মধ্যে গড়ে উঠেছিলো বন্ধুত্ব। রুমির হাতেই সর্বপ্রথম প্রশিক্ষণে হাতেখড়ি আজম খানের। এর মধ্যে ঢাকা প্লাটুনের রুমিরা অপারেশনে করতে ঢাকায় চলে গেলেন। কদিন বাদেই খবর হলো রুমিরা বেশ কয়েকজন মিলিটারির হাতে ধরা পড়েছেন।
.
এর কিছুদিনের মাথায় প্রশিক্ষণ শেষ হলো আজম খানদের। গেরিলা আক্রমণের জন্য কতোখানি প্রস্তুত তা পরখ করানোর জন্য তাঁদের পাঠানো হলো সালদা নদী রণাঙ্গনে। রণাঙ্গনেও আজম খান ছিলেন চিরকালীন নির্ভীক। গান গাইতে গাইতেই যুদ্ধ করতেন।
.
সেদিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আজম খান পরবর্তীতে বলেছিলেন, ‘আমি বেশির ভাগ সময় গান গাইতাম আর যুদ্ধ করতাম। সেসময় কিশোর কুমার ছিল হিট। তার গানই বেশি গাওয়া হতো। হিন্দি বাংলা কত গান করছি আর গুলি চালাইছি! এমনও হয়েছে গুলি করছি, গান গাইছি, আবার মুড়ি মুড়কি চিবাচ্ছি। আমার গান শুনে পাশ থেকে সহযোদ্ধারা বলত – ওই গান থামা, পাক সেনারা শুনলে বুইঝা যাইবো তুই কই আছস। তোর মরণের ভয় নাই নাকি। আমি বলতাম – আরে মরবই তো, ভয় পাওয়ার কী আছে! গান গাইয়া লই।’
.
এরপরই আজম খানকে ঢাকা প্লাটুনের সঙ্গে পাঠানো হয়েছিলো ঢাকায়। তাঁকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো ২ নম্বর সেক্টরের একটি সেকশন ইনচার্জ হিসেবে। সেকশন কমান্ডার হয়ে এসময়ে ঢাকা ও চারপাশের বেশ কয়েকটি দুর্ধর্ষ গেরিলা অপারেশনে অনশ নিয়েছিলেন আজম খান।
.
এর মধ্যে সবচেয়ে দুর্ধর্ষ অপারেশন ছিল ‘অপারেশন তিতাস। অপারেশন তিতাসে ডেমরার পাশে তিতাস গ্যাসের একটা পাইপ লাইনে বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
.
কিন্তু কাজটা করতে গিয়ে তিনি দেখলেন ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে পড়েছেন তারা। কারণ অপারেশনের আগের দিন যে এলাকাটি রেকি করেছিলো সে হিসেবে কিছুটা গড়বড় করেছিলো। তাঁদের নৌকা তখন নদীতে। আজম খান একাই বোমা সংযুক্ত করলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বোমা গেল ফেটে। বোমার বিকট শব্দেই চারপাশের মানুষ সব পালাতে লাগল। পাইপ লাইন ফেটে আগুনের তখন লেলিহান শিখা।
.
আওয়াজ শুনে নৌকায় অপেক্ষমান সহযোদ্ধারা ভাবলেন অপারেশন সফল হয়েছে তাই তারা চলে গেলেন। কিন্তু দুজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে পালাতে গিয়ে আজম খান দেখলেন তিনি ও তাঁর সঙ্গী সহযোদ্ধাদের শক্তি আর দম ফুরিয়ে গেছে। অস্ত্র আর গোলাবারুদ তখন নৌকাতেই।
.
নৌকা নিয়ে পালাতে যাবেন এমন সময় নৌকা উঠতেই দেখলেন নৌকায় পানি উঠছে। তৎক্ষণাৎ নৌকা থেকে নেমে পানি সেঁচে সাঁতার কাটতে কাটতে দূরবর্তী এক গ্রামে গিয়ে উঠে প্রাণে বাঁচতে পেরেছিলেন আজম খানেরা। এসময়ে ত্রিশটিরও অধিক যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন আজম খান।
.
আজম খান যুদ্ধে যাওয়ায় তাঁর পরিবারের সদস্যদের উপরও নেমে এসেছিল অবর্ণনীয় নির্যাতন ও নিপীড়ন। বাড়ির সামনের এক দোকানদার বাকি বাবদ তাঁর কাছে দেড়শো টাকা পেতো। কিন্তু আজম খান যুদ্ধে চলে যাওয়ায় তা আর শোধ করতে পারেননি। যার ফলে সেই দোকানদার প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে পাকিস্তানিদের তাঁর বাড়ি চিনিয়ে দিয়েছিল।
.
পাকিস্তানিরা প্রায়ই তাঁর বাবাকে জিজ্ঞেস করতো, ‘আজম কাহা হ্যায়?’ জবাবে তাঁর বাবা বলতেন- ‘আজম নেহি হ্যায়।’ তাঁর মা ভালো উর্দু বলতে পারায় তিনি সেনাদের সঙ্গে কথা বলে মিটিয়ে নিতেন। কিন্তু তাতেও তাঁদের শেষ রক্ষা হয়নি। তাঁর ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য বের করার জন্য তাঁর ছোটভাইকে ছাদে উল্টো করে ঝুলিয়ে পিটিয়েছিলো হানাদার সেনারা। .
ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁর ভাই আলম খান ও মোহন খানকে খালী গায়ে দাঁড় করিয়ে জেরা শুরু করলো হানাদারেরা। জানালো খোঁজ না দিলে তাদের মেরে ফেলা হবে। এমন সময় আজম খানের বাবা তাদের দেখাদেখি নিজের শার্ট খুলে বললেন, ‘আমার ছেলেদের মেরে ফেললে আমার বেঁচে থেকে কী লাভ!’ ঠিক এমন সময় ভারতীয় বাহিনীর বোমা বর্ষণ শুরু হলে তাদের ছেড়ে পালিয়ে যায় হানাদার বাহিনী।
.
যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে আসার পর আজম খানের শুরু হলো এক নতুন যুদ্ধ। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে নতুন সেই যুদ্ধে তাঁর একমাত্র হাতিয়ার ছিলো গান আর গিটার। সেই বিধ্বস্ত প্রান্তরে দাঁড়িয়েই আবার ফের মঞ্চে ফিরলেন আজম খান।দেশ স্বাধীনের কয়েক মাসের মাথায় বন্ধুদের নিয়ে গড়লেন নতুন ব্যান্ড উচ্চারণ।
.
বন্ধু নীলু আর মনসুর গিটারে। সাদেক ড্রামে আর তিনি ভোকালে। বিটিভির এক অনুষ্ঠানে গাওয়া ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’, ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ এই দুই গানেই মেতে উঠলো সমগ্র দেশ। এখানে তো আজম খানের কেবল শুরু।
.
পাড়ার বন্ধু ফকির সাঁই, কিংবা পরবর্তীতে বন্ধু ফকির আলমগীর, পিলু মমতাজ কিংবা ফেরদৌস ওয়াহিদকে নিয়ে একের পর এক জুটি। সেই জুটির মাঝেই লিখলেন অবিস্মরণীয় গান ‘অতঃপর জীবনে কিছু পাব নারে/ ভুলিনি সে ভাবনা’। বাংলা গানের ইতিহাসে এটিই ছিল সর্বপ্রথম হার্ড রক।
.
জীবনবোধ আর সংগীত অতঃপর একাকার হয়ে উঠলো তাঁর গলায়। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের এক সকালে রেললাইন দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আজম খান। পথে খাবারের আশায় কয়েকজন গরিব শিশু ঘিরে ধরলো তাঁকে। পকেটে যা ছিলো সবটিই দিয়ে দিলেন আজম খান। বাড়ি ফিরে লিখেছিলেন অবিস্মরণীয় সেই গান ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে; জন্মেছিল একটি ছেলে; মা তার কাঁদে; ছেলেটি মরে গেছে।’
.
১৯৭৪ সালে বিটিভিতে এক অনুষ্ঠানে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ নিয়ে গানটি গিয়েছিলেন আজম খান। গানটি নিমেষেই সকল শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছিল। ফলাফল তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার বিটিভিতে তাঁর গানের উপর জারি করলো অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা। একসময় বন্ধু শেখ কামালের সঙ্গে তাঁর দারুণ সম্পর্ক থাকলেও মুহূর্তেই সেই সম্পর্কের ইতি ঘটলো।
.
একবার কোন এক কাজের প্রয়োজনে গিয়েছিলেন হাইকোর্ট মাজারে। পথে রিকশায় চেপে বাড়ি ফিরে ভাড়া পরিশোধ করতে গিয়ে দেখলেন পকেটের মানিব্যাগ হাওয়া। বুঝলেন হাইকোর্টের মাজারেই মেরে দিয়েছে কোন এক পকেটমার। অতঃপর রচিত হলো সেই বিখ্যাত গান, ‘হাইকোর্টের মাজারে কত ফকির ঘুরে, কজনা আসল ফকির’।
.
আজম খানের প্রিয় দুই বন্ধু ছিল সহোদর জাহাঙ্গীর ও শাহজাহান । এই দুই ভাইকে পাড়ার লোকেরা আলাল ও দুলাল বলে ডাকতো। তাঁদের বাবা চাঁন মিয়া সাইকেল চালাতেন। তাদের জীবনকে দেখেই আজম খান লিখেছিলেন,
‘আলাল ও দুলাল, আলাল ও দুলাল/ তাদের বাবা হাজি চান; চানখারপুলে প্যাডেল মেরে পৌঁছে বাড়ি।’
.
আজম খানদের বাড়িতে দোতলায় ভাড়া থাকতো পাপড়ি নামের এক মেয়ে। কথা বলতে বলতে প্রেম হয়ে যায় আজম খানের সাথে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়ে হলোনা। সেই দুঃখ নিয়ে আজম খান ‘সারা রাত জেগে গান বেঁধেছিলেন, ‘পাপড়ি কেন বোঝে না; তাই ঘুম আসে না।’
.
কেবল গানই নয় প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও খেলেছেন আজম খান। সম্ভবত তিনিই ছিলেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠতম ক্রিকেটার। ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগে ক্রিকেট খেলেছিলেন আজম খান। প্রায়শই আফসোসের স্বরে বলতেন ‘ইশ একটা বিশ্বকাপ যদি খেলতে পারতাম!
.
শোষিত আর বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর বারবার প্রতিধ্বনিত হয়েছে আজম খানের গলায়। তাঁর গীতি কলমে এবং গলায় উঠে এসেছে মানবতার গান। অজস্র প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি গেছে গেছেন জীবনের জয়গান।
.
শৈশবে ভাই আলম খানের কাছে কিছুদিন গান শিখলেও সঙ্গীতের উপর কখনোই কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলোনা আজম খানের। কিন্তু অদম্য অধ্যবসায় ,গানের প্রতি তীব্র ভালোবাসা আর হার না মানা ইচ্ছে শক্তি বাংলা পপ সঙ্গীতের অবিসংবাদিত সম্রাট হিসেবে পরিণত করেছে আজম খানকে।
.
আজ থেকে এক যুগ আগে আজকের দিনে (৫জুন ) চিরতরে চলে গিয়েছিলেন আজম খান। প্রয়াণ দিবসে আমাদের পপ সম্রাট ও অবিস্মরণীয় আজম খানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।