নিজস্ব প্রতিবেদক ::
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশকে রক্ষা করতে ছাত্র তরুণ ও যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছে। তারুণ্যের শক্তি নিয়ে এই সরকারের পতন ঘটানো হবে। বুধবার বিকেলে নগরীর কাজির দেউড়ি মোড়ে চট্টগ্রাম যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল আয়োজিত ‘দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আজকে সময় এসেছে এদেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন।
বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশকে রক্ষা করতে ছাত্র তরুণ ও যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। এ সরকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। পুলিশ প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় বসে আছে। জনগণের ওপর স্ট্রিমরোলার চালাচ্ছে এ সরকার। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে বর্তমান যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেছিল, আমি ঘরে ঘরে চাকরি দেব। অথচ এখন চাকরি নাই, ব্যবসা-বাণিজ্য নাই। আজকে সবচেয়ে করুণ অবস্থায় আছে আমাদের তরুণরা।
তিনি আরও বলেন, তাদের সামনে অন্ধকার। তরুণরা কিভাবে পরিবারকে সাহায্য করবে। আজকে সাধারণ মানুষ, কৃষক যুবকরা বাজারে যেতে পারে না। বাজারে আগুন। চাল ডাল তেল সবজি, চিনি লবণ, ডিম-মুরগির দাম বেড়েছে। কিন্তু তারা ভাল আছে। তারা নিজেদের ছেলেমেয়েদের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। আর আমরা নিপীড়িত হয়ে দিনযাপন করছি।
১৫ বছর যাবত অত্যাচার নির্যাতন চলছে উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, গুম-খুন করেছে। আমাদের নেতাদের ফাঁসি দিয়েছে। আমাদের সমস্ত গণতান্ত্রিককর্মী, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে প্রতিদিন হয়রানি করছে। এখনো আসলাম চৌধুরী জেলে আছেন। আরও অনেক নেতাও জেলে। অনেককে খুন করা হয়েছে।
সারাদেশে ৬শ’র বেশি মানুষকে গুম করা হয়েছে। গুম মানে তাদের তুলে নিয়ে যায় আর খবর নাই। বিএনপি নেতা ইলিয়াছ আলীকে গুম করা হয়েছে। ১৩ বছর তার খোঁজ নেই। প্রতি পদে পদে আমাদের গলা টিপে ধরেছে। এমন দেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? আমাদের দেশটি ছিল গণতান্ত্রিক দেশ। যে দেশে আমাদের ভোট আমরা যাকে খুশি তাকে দেব। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কারণে সাংবাদিকরা লিখতে পারেন না।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছেন। আমাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। আমরা কোর্টে যেতে পারি না। মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দেওয়া হয়। হাই কোর্ট লোয়ার কোর্টে জামিনের জন্য যেতে হয়।
চট্টগ্রামে এমন কোনো নেতা নাই যাদের নামে মামলা নাই। তারা কত ভীরু কাপুরুষ। তারা আরও বলে ক্ষমতায় যাবে। ক্ষমতায় তারা যাবে পুলিশ, বিজিবি, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে। আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা জনগণকে ক্ষমতায় নিতে চাই। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।
চট্টগ্রামে তরুণরা রাস্তায় নেমেছে। আমেরিকা এদেশে স্যাঙ্কশন দিয়েছে। কেন স্যাঙ্কশন দেওয়া হবে দেশকে। মার্কিন ভিসা নীতিতে তারা ভয় পেয়েছে। কারণ তাদের সবাই বিদেশে। এবার যদি ভোট কারচুপি হয়, দিনের ভোট রাতে করে তাহলে তোমাদের রেহাই নাই। আর সময় দেওয়া যাবে না তাদের। বিদ্যুৎ দিতে পারে না। টাকা তো তিন চার বার নিয়েছেন। সারচার্জ নিয়েছেন। বিদ্যুতের কার্ড থেকে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। তারা উন্নয়নের কথা বলে। এদেশে কিসের উন্নয়ন কার উন্নয়ন হয়েছে?
বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল করছে, অথচ চাকরি, স্বাস্থ্য সেবা নাই। দেশে ডলার নেই। সম্পদ চুরি করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক লুট করেছে তারা। ভোটের অধিকার, আদালতের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। গাজীপুরে জাহাঙ্গীরের মায়ের কাছে হেরে গেছে এ সরকারের প্রার্থী। বরিশালের পীর সাহেবে কাছে হেরে যাওয়ার আগে কারসাজি করে জয়ী হয়েছে। পীর সাহেব আলেম মানুষ, তাকে মারতে দ্বিধা করেনি তারা। নির্বাচন মানে প্রহসন করা।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা বুকে সাহস নিয়ে রাস্তায় থাকব। পালাবে ভোট চোর। আর যাদের কোনো জনসমর্থন নাই, যারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, যাদের রাজনীতি ভোট চুরি করা, ব্যাংক চুরি করা, শেয়ার বাজার ও বালিশ চুরি করা তারাই পালাবে। বুকে সাহস রেখে তরুণরা রাজপথে শক্তিশালী হয়ে থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ দলটি রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্ভরশীলতা হলো কিছু পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সরকারি কর্মকর্তা।
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে সেখানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তিসহ প্রমুখ নেতারা।
এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় জেলা শহর ও উপজেলা থেকে নেতাকর্মীদের বাস ট্রাকযোগে সমাবেশস্থলে নিয়ে আসা হয়। সুদূর কক্সবাজার এবং নোয়াখালী থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়।
সমাবেশে দু’গ্রুপের হাতাহাতি ॥ তারুণ্যের এ সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যের আগে উপস্থিত নেতাকর্মীদের দুগ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে নেতাদের হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সমাবেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কর্মী সমর্থকদের হাতে ছিল লাঠিসোঁটা। এরা লাঠি প্রদর্শন করে, সরকারের পতনের মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ-যুবদল সংঘর্ষ ॥ সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে বুধবার দুপুরের দিকে চট্টগ্রাম কলেজ এলাকায় ছাত্রলীগ ও যুবদল কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় যুবদল ও ছাত্রদলের মিছিল কাজির দেউড়িমুখী হয়। মিছিল থেকে কলেজ প্রাঙ্গণে থাকা ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলা চালায় যুবদল কর্মীরা। এ সময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে আহত হয় কয়েকজন।
মুক্তিযুদ্ধের দেয়ালিকা উৎপাটন ॥ ছাত্রদল যুবদল কর্মীরা কাজির দেউড়িমুখী হওয়ার সময় দুপুরে জামালখান এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের দেয়ালিকা উৎপাদন করে ফেলে। ছাত্রদল যুবদল কর্মীরা কি কারণে মুক্তিযুদ্ধের দেয়ালিকার ওপর হামলে পড়ল তার কোনো কারণ পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, জামালখান এলাকায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতীয় আন্দোলনের নেতাদের স্মৃতি সংবলিত নান্দনিক সৌন্দর্যের দেয়ালিকা রয়েছে।
তীব্র যানজট ॥ তারুণ্যের এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর কাজির দেউড়ি, স্টেডিয়াম এলাকা, ওয়াসা মোড়, লালখান বাজার, জামালখান ও চকবাজার পর্যন্ত ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। কাজির দেউড়ির চৌরাস্তার মাথায় এ সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা চৌরাস্তা ও আশপাশ এলাকা দখলে নিয়ে সমাবেত হয়। ফলশ্রুতিতে এসব সড়ক দিয়ে চলাচলরত যানবাহনকে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। যানবাহনগুলোকে দীর্ঘ সময় থেমে থাকতে হয়।
মুক্তিযুদ্ধের দেয়ালচিত্র ভাঙচুর ঘটনায় আটক ৫ ॥ চট্টগ্রামে বিএনপির তারুণের্য সমাবেশে যাওয়ার পথে জামালখান মোড়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিযুক্ত পটম্পার্ড গ্লাস ও মুক্তিযুদ্ধের দেয়ালচিত্র ভাঙচুরের ঘটনায় যুবদলের ৫ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার বিকেলে এ ঘটনার পর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযান চালিয়ে রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
যাদের আটক করা হয়েছে তারা হলো মো. মাহবুব সিদ্দিকী (৩৫), মো. এরফান (৩০), নুরুল ইসলাম ওরফে মাসুম (৩৯), মো. ইমন খান (২০) ও মো. মহিউদ্দিন হাসান ইমন(২০)। পাঁচজনই বর্তমানে যুবদলের কর্মী। এদের মধ্যে মহিউদ্দিন চান্দগাঁও ওয়ার্ড এবং বাকিরা বাকলিয়া ওয়ার্ড যুবদলের কর্মী। পুলিশ জানিয়েছে, এদের মধ্যে মাহবুব হক সাবেক বাকলিয়া ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক, এরফান বাকলিয়া ছাত্রদলের ৪ নম্বর ইউনিটের সাবেক সভাপতি।