নিজস্ব প্রতিবেদক::
রাজশাহীতে জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। ইতোমধ্যেই কোরবানির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন মানুষ। তারাও বাজারমুখী হচ্ছেন। কেউ দাম বুঝতে আবার কেউ কিনতে পশু হাটগুলোতে ভিড় করছেন।
কোরবানি ঈদ সামনে, তাই হাটগুলোতে মানুষের চাপ বাড়ছে। হাটে উঠতে শুরু করেছে গরু-ছাগল। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততই রাজশাহী অঞ্চলের পশুহাটগুলোতে জমে উঠেছে পশু বেচাকেনা। রাজশাহী মহানগরীর সিটি হাট, চৌবাড়িয়া হাট, নওহাটা হাট ও তানোরের মু-ুমালা হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে ছোট গরু। বেশি দামের গরুর দিকে না ঝুঁকে ক্রেতারা ছোট গরুর দিকে ঝুঁকেছে।
দোহারে ৪৮ মণের ‘কালাপাহাড়’
নিজস্ব সংবাদদাতা, দোহার-নবাবগঞ্জ থেকে জানান, কোরবানির ঈদকে ঘিরে এবার সবচেয়ে বড় তারকা হিসেবে আলোচনায় রয়েছে ‘কালাপাহাড়’ নামক একটি ষাঁড়। ষাঁড়টির দৈর্ঘ্য ১১ ফুট, উচ্চতা ৭.৩ ফুট। যার লাইভ ওজন রয়েছে প্রায় দুই হাজার কেজি বা প্রায় ৪৮ মণ। বিশাল দেহের আকৃতি ও গায়ের রং কালো হওয়ায় ষাঁড়টির মালিক নাম রেখেছেন ‘কালাপাহাড়’। ঢাকার দোহার উপজেলার কুসুমহাটি ইউনিয়নের বাংলা বাজার সংলগ্ন উত্তর শিলাকোঠা এলাকার আব্দুল জলিল বেপারী এ ষাঁড়টি লালন-পালন করেছেন। এ ছাড়াও তার আরও একটি গাভীও রয়েছে। ষাঁড়টিকে দেখতে দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন লোকজন ও অনেক ব্যবসায়ী ভিড় করছেন এই খামারির বাড়িতে। ষাঁড়টির মালিক এবার দাম হেঁকেছেন ১৫ লাখ টাকা। কাক্সিক্ষত দাম পেলে ষাঁড়টিকে বিক্রি করে দেবেন বলে জানান ষাঁড়টির মালিক।
স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, ৮ বছরের ব্যবধানে তিনগুণ বেড়েছে গবাদিপশুর উৎপাদন। ঈদুল আজহা সামনে রেখে এ বছর ৮ লাখ ৪২ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু বিক্রির জন্য প্রস্তত করেছেন খামারিরা। অনলাইন ও হাটে পশু কেনা-বেচা এখনও পুরোদমে শুরু না হলেও সংকট হবে না বলছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে চাহিদার সঙ্গে জোগানের সামঞ্জস্য থাকায় এবারও পর্যাপ্ত গরু মহিষ, ছাগল মিলবে বাজারগুলোতে। গবাদিপশুর সামান্য যে ঘাটতি থাকবে, তা দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে আসা পশুতে পূরণ হবে। জানা গেছে, কোরবানি উপলক্ষে এবার গবাদিপশুর চাহিদা ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি। চাহিদার সঙ্গে জোগানের পার্থক্য মাত্র ৩ শতাংশ কম।
বিভিন্ন বাড়ি ও খামারে কোরবানির জন্য পশু রয়েছে ৮ লাখ ৪২ হাজার ১৬৫টি। এর মধ্যে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫টি গরু, ৭১ হাজার ৩৩৩টি মহিষ, ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪০৫টি ছাগল ও ভেড়া। অথচ ২০১৫ সালে কোরবানি পশুর উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার। ৮ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে তিনগুণ গবাদি পশু। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই অল্প যে ঘাটতি রয়েছে তাও পূরণ হয়ে যাবে। এবারও গতবছরের মতো চট্টগ্রামে পশুর কোনো সংকট হবে না।
রাউজানে ৪৫৯ খামারে প্রস্তুত পশু
সংবাদদাতা, রাউজান, চট্টগ্রাম থেকে জানান, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে রাউজানের ৪৫৯ খামারে প্রস্তুত করা হয়েছে ৪১ হাজার ৬১৭টি পশু। এর মধ্যে রয়েছে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। খামারিদের বাইরে অনেকে বিক্রির উদ্যোগেও কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছেন।
পশুর খামারের জন্য রাউজানের প্রসিদ্ধি রয়েছে। প্রতি বছরের মত এবারও খামারিরা গবাদি পশু প্রস্তুত করে এখন বিক্রির অপেক্ষায়। এসব পশু যাবে স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের বাজারগুলোতে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর অন্যতম প্রধান গন্তব্য। পশুর খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার প্রভাব এর মূল্যে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে খামারগুলোতে এবার উৎপাদন বেশ ভালো।
রাউজানের ডাবুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ হিংগলা শান্তিনগর এলাকায় বারাকা এগ্রো ফার্মের মালিক সুমন দে বলেন, তার ফার্মে মাঝারি ও বড় সাইজের শতাধিক গরু রয়েছে। রাউজানের গহিরা এলাকায় গহিরা এগ্রো ফার্মে ১৭টি মাঝারি, বড় সাইজের গরু রয়েছে বলে জানান ফার্মের মালিক সাখাওয়াত হোসেন পিবলু।
রাউজান উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. জুমু চক্রবর্তী বলেন, পবিত্র কোরবানির সময়ে বিক্রয় করার জন্য ৪৫৯টি খামারে ৪১ হাজার, ৬১৭টি গরু, মহিষ, ছাগল ভেড়া প্রস্তুত করে রেখেছেন খামার মালিকরা।
শাহজাদপুরে ব্যস্ত খামারিরা
নিজস্ব সংবাদদাতা শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে শাহজাদপুরের শত শত গো-খামার ও বাথানে প্রায় লক্ষাধিক কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন খামারিরা। এসব পশু আর ক’দিন পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন পশুর হাটে সরবরাহ করা হবে।
শাহজাদপুরে এবার ফ্রিজিয়ান, শাহীওয়াল, অস্ট্রেলিয়ান, জার্সি ও দেশীয় সংকর জাতসহ বিভিন্ন জাতের ৭৬ হাজার ৮শ’ ৩৪টি ষাঁড়, ২১ হাজার ৩শ’ ৬৫টি ছাগল ও ১৩ হাজার ৬শ’ ৪৬টি ভেড়া কোরবানির জন্য মোটাতাজা করেছে খামারিরা। তবে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে অন্যান্য বছরের তুলনায় খরচ বেশি হয়েছে খামারিদের। তবে এগুলো বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশায় বুক বেঁধে আছেন খামারিরা। উপজেলার গাড়াদহ চরপাড়া গ্রামের গো-খামারি সাদ্দাম হোসেন ১৪টি ষাঁড় ও ১৮টি ছাগল মোটাতাজা করেছেন। ষাঁড় সাড়ে তিন লাখ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ও ছাগল ২০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকায় বিক্রি করবেন। এ পশুগুলো ন্যায্যমূল্যে কোরবানির হাটে বিক্রি হলে বেশ লাভবান হবেন তিনি।
বরিশালে চাহিদা কমার আশঙ্কা
স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, গত বছরের তুলনায় বরিশাল বিভাগে এবার কোরবানির পশুর চাহিদা কিছুটা কমার আশঙ্কা করেছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, মহামারি করোনা, বৈশ্বিক মন্দা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে শেষ সময়ে গিয়ে চাহিদায় পরিবর্তনও ঘটতে পারে ।
জানা গেছে, ২০২১ ও ২০২২ সালে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় কোরবানিতে গবাদিপশুর চাহিদা ছিল ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৯৩৭টি। আর এবার এই চাহিদা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ২৯টি। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ৮৮ হাজার পশুর চাহিদা কম।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. আব্দুস সবুর বলেন, আমাদের ধারণা, ২০ শতাংশের কিছু বেশি গরু বাইরের জেলা থেকে সরবরাহ করার প্রয়োজন হতে পারে। বাকি ৬০ শতাংশ পশু স্থানীয় খামারি এবং ২০ শতাংশ গৃহস্থালি পর্যায় থেকে জোগান দেওয়া সম্ভব হবে।
মাগুরায় পশুর হাট জমে উঠেছে
নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা থেকে জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট জমে উঠেছে। আমদানি ও দাম বর্তমানে বেশ ভালো। ফলে খামারিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। জানা গেছে, গরু, ছাগলের আমদানি ভালো হচ্ছে। এ বছর সদর উপজেলার, কাটাখালী, আলমখালী, রামনগর, আলোকদিয়া, মহম্মদপুরের বেথুলিয়া, নহাটা, শালিখার আড়পাড়া, সীমাখালী, পুলুম, শ্রীপুরের চতুরবাড়িয়া, লাঙ্গলবাধ ও সারঙ্গদিয়া প্রভৃতি স্থানে কোরবানির পশু হাট বসছে। হাটে বিভিন্ন আকারের গরু ও ছাগল উঠেছে বিক্রির জন্য। প্রতিটি গরু ৬০ হাজার টাকা এক থেকে দেড় লাখ টাকা মধ্যে। ছাগলে দাম প্রকার ভেদে ১০-২০ হাজার টাকার মধ্যে।