প্রথম দুই ধাপের ভোটে টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, নরসিংদী, কুমিল্লা, পিরোজপুরসহ অন্তত ২০ জেলার নানা উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনেরা। অভিযোগ উঠেছে, এর লক্ষ্য স্থানীয় রাজনীতিতে নিজস্ব প্রভাব বলয় তৈরি করা।
তবে নির্দেশ অমান্য করা এসব এমপি-মন্ত্রীদের কঠোর শাস্তি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্র বলার পরও স্বজনেরা উপজেলার ভোটে থাকায় পদ থেকে বহিষ্কারসহ এমপি-মন্ত্রীদের আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্তও আসতে পারে আগামীকাল মঙ্গলবার। নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, সেদিন দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন দল সভাপতি শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাদের সুযোগ দিতে এবং ভোট অংশগ্রহণমূলক করতে এবার দলীয় প্রতীক দেয়নি আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বললেও, দুয়েকজন ছাড়া তাতে কান দেননি কেউই। নিজ প্রার্থী জেতানোর এই মরিয়া চেষ্টায় ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতারাও।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আমাদের যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা সেসব পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি না। ফলের দিনের পর দিনের দলের ভেতরের চেইন অফ কমান্ড দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবারের সভায় এসব নিয়ে আলোচনা হবে। দলের সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া নির্দেশনা একান্তভাবে আমাদের মেনে চলতে হবে।’
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে চেষ্টা করছেন তাঁরা যদি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না পায় সেটা কি তবে শাস্তি নয়। আমাদের কাছে অনেক কৌশল আছে, অনেক পদ্ধতি আছে, কীভাবে শাস্তি দেওয়া হবে তা সময়ই বলে দেবে। শুধু বহিষ্কারের ভেতর দিয়েই শাস্তি চূড়ান্ত নয়।’
২০১৯ সালে দলীয় প্রতীকে উপজেলার ভোটেও বিদ্রোহী প্রার্থী হন অনেকে। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেও শেষ পর্যন্ত করা হয় ক্ষমা। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, এবার আর সে সুযোগ মিলছে না। অভ্যন্তরীণ বিরোধ বাড়ায়, দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। নির্দেশ অমান্যকারী এমপিদের তালিকা করছেন সাংগঠনিক সম্পাদকেরা।
সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে দল অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে শাস্তির আওতায় না আসলে অনেকেই বেশি উৎসাহিত হবেন।’
আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, ‘কেউ ইচ্ছা করলেই ফ্রি স্টাইলে যা কিছু করার এখতিয়ার রাখে না। কেউ দলীয় নির্দেশনা প্রতিপালন না করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে উপজেলা নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে রাজনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যবস্থায়ও জোর দিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।