জা‌তির পিতার উদ্যো‌গে বি‌দ্রোহী ক‌বি নজরুল আমা‌দের হ‌য়ে‌ছি‌লেন – দৈনিক মুক্ত বাংলা
ঢাকারবিবার , ২৭ আগস্ট ২০২৩
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি-ব্যবসা
  3. আইন ও আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আরও
  6. ইসলাম ও ধর্ম
  7. কোভিট-১৯
  8. ক্যারিয়ার
  9. খেলা
  10. জেলার খবর
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. বিনোদন
  13. মি‌ডিয়া
  14. মু‌ক্তিযুদ্ধ
  15. যোগা‌যোগ

জা‌তির পিতার উদ্যো‌গে বি‌দ্রোহী ক‌বি নজরুল আমা‌দের হ‌য়ে‌ছি‌লেন

সম্পাদক
আগস্ট ২৭, ২০২৩ ৬:০২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ডি এস মাহফুজা হো‌সেন মিতা ::

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক বড় কীর্তি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে আনা। নজরুল দেশকে ভালোবেসেছিলেন বুক উজাড় করে। দেশের সঙ্গে তার অস্তিত্ব মিশে গিয়েছিল। দেশ মানে গোটা ভারতবর্ষ। তার জন্ম বিহারের পাদদেশে বর্ধমানের রুক্ষ, শুষ্ক, বৈরী প্রাকৃতিক পরিবেশে। কিন্তু বাংলাদেশ তার বিপরীত—সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা। নানা উপলক্ষ্যে তিনি এসেছেন বাংলাদেশে। কখনো শুধুই বেড়ানোর জন্য, আবার কখনো কর্মোপলক্ষ্যে, কখনো সভা-সমিতিতে যোগ দিতে। এমনকি ১৯২৬ সালের সংসদ (ভারতীয় ব্যাপস্থাপক সভা) নির্বাচনে লড়তেও এসেছেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই পূর্ববঙ্গে—ঢাকা-ফরিদপুরে। তিনি বাংলাদেশকে বড় আপন মনে করেছেন। বাংলাদেশও তাকে টেনে নিয়েছে আপন মমতায়, যেমন—কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবী স্নেহকাঙাল নজরুলকে বরণ করেছিলেন পুত্রস্নেহে।

বঙ্গবন্ধুর কল্যাণে এই বাংলাদেশই শেষ পর্যন্ত হয়ে গেল কবির চিরদিনের ঠিকানা। ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম নজরুল ভ্রমণ করেছেন বাংলাদেশের নানা জায়গায়—ময়মনসিংহ, বরিশাল, কুমিল্লা, ঢাকা, বগুড়া, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীর সন্দ্বীপ (তখন সন্দ্বীপ নোয়াখালীর অধীন ছিল), ফেনী, সিলেট, রাজশাহী, দিনাজপুর, খুলনা, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জ, মাদারীপুর, যশোর, ফরিদপুর, জয়দেবপুর, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রামে এমনকি জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পর্যন্ত। কুমিল্লার আলী আকবর খানের চক্করে পড়ে তো তিনি কুমিল্লার জামাই-ই হয়ে গেলেন। ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক নিবন্ধ থেকে জানা যায়, নজরুল বাংলাদেশের ২৬টি জেলা সফর করেছেন। কোনো কোনোটিতে এসেছেন ছয়-সাত বার করেও।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি নজরুল উভয়ই প্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর কবিগুরুর গানকে জাতীয় সংগীত আর নজরুলের গানকে বাংলাদেশের রণসংগীত হিসেবে গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে নবগঠিত একটি ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের মধ্যে একটি ভারসাম্য স্থাপন করা হয়। প্রায় পাচ দশক আগে ‘সৃষ্টিসুখের উল্লাস’ থেমে যাওয়া একজন কবির জন্য এটি ছিল একটি বিরাট স্বীকৃতি। উপমহাদেশে স্বাধীনতার প্রথম দাবি উত্থাপনকারী কবি পশ্চিমবঙ্গে দুর্দিনে আছেন, চরম অবহেলার শিকার হচ্ছেন ভেবে বঙ্গবন্ধু কবিকে ঢাকায় এনে সাড়ম্বরে তার জন্মদিন উদযাপনের চিন্তাভাবনা করেন। সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এক মাসের মধ্যে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬-৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম বিদেশ সফরে যান কলকাতায়। সে সফরে তার যা কিছু অর্জন তার মধ্যে অন্যতম হলো কবিকে বাংলাদেশে আনার পদক্ষেপ। বঙ্গবন্ধুর এই পদক্ষেপটি এখনো সেভাবে আলোচিত ও মূল্যায়িত হয়েছে বলে মনে হয় না। তবে এ কথা বলা যায় যে, এর মাধ্যমে প্রায় বিস্মৃত কবিকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসা হলো। কলকাতা সফরকালে বঙ্গবন্ধুকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে রাখা হয় পশ্চিমবঙ্গের রাজভবনে। রাজভবন হলো রাজ্যপালের (গভর্নর) অফিশিয়াল বাসভবন। রাজ্যপাল তখন পশ্চিমের অ্যান্টনি ল্যান্সলট ডায়াস। বঙ্গবন্ধু তার কাছেই কবিকে বাংলাদেশে আনার প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। তিনি কবিকে ঢাকায় এনে ধুমধাম করে কবির ৭৩তম জন্মদিনটি পালন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। রাজ্যপালের পরামর্শে বিষয়টি নিয়ে বঙ্গবন্ধু ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কথা বলেন। এরই মধ্যে খবর পাঠিয়ে রাজভবনে কবির পরিবারের সদস্যদের আনিয়ে আলাপ করেন বঙ্গবন্ধু। এরপর চলে চিঠি-চালাচালিসহ নানামুখী কূটনৈতিক তৎপরতা।

নজরুলকে আনার জন্য বঙ্গবন্ধু কলকাতায় পাঠান তার বিশেষ প্রতিনিধি তৎকালীন ক্যাবিনেট মন্ত্রী মতিউর রহমান এবং আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মুস্তাফা সারোয়ারকে। কবির ছোট ছেলে অনিরুদ্ধ কবিকে ঢাকায় আনার বিরুদ্ধে ছিলেন। যদিও বড় ছেলে সব্যসাচীর এ ব্যাপারে উত্সাহ ছিল খুবই। অবশেষে ১৯৭২ সালের ২৪ মে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে চড়ে কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছেন কবি। কবির সঙ্গে আসেন দুই ছেলে, তাদের স্ত্রী ও সন্তানেরা এবং কবির ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডি কে রায়। কবিকে অভ্যর্থনা জানাতে ঢাকার এয়ারপোর্ট অর্থাৎ তেজগাঁও বিমানবন্দর ততক্ষণে লোকে-লোকারণ্য। এত মানুষ সেখানে ভিড় জমিয়েছিল যে, বিমানের সিঁড়ি লাগানোও নাকি অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। কোনোভাবেই সামলানো যাচ্ছিল না অপেক্ষমাণ হাজার হাজার জনতাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে গোপনে কবিকে নামানো হয় বিমানের পেছনের দরজা দিয়ে। কোলে করে ওঠানো হয় অ্যাম্বুলেন্সে। স্বাভাবিক পথে নয়, বিমানবন্দরের উত্তর দিকের ফ্লাইং ক্লাবের পথ দিয়ে কবিকে ধানমন্ডিতে তার জন্য নির্ধারিত বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়। বঙ্গবন্ধু নিজে বাড়িটি পছন্দ করে এর নাম দিয়েছিলেন ‘কবি ভবন’। সরকারের বরাদ্দ করা সেই বাড়িটি এখন নজরুল ইনস্টিটিউট। নজরুলকে কবি ভবনে নেওয়ার পর সেখানে ফুলেল শুভেচ্ছায় স্বাগত জানাতে ছুটে যান দেশের কান্ডারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কবি পরিবারকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। তাত্ক্ষণিকভাবে কবির পেনশন ৩৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়। এক এক করে কবিকে স্বাগত জানাতে আসেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। আসেন মওলানা ভাসানীসহ বিশিষ্ট জনেরা। হাজার হাজার মানুষ ফুল হাতে ভিড় জমায় কবি ভবনের আশপাশে। কবি ভবনে প্রতিদিন পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা শুরু হয়। ত্রিশের দশক বাদ দিয়ে সারা জীবন কবির অর্থকষ্টে কাটলেও ঢাকায় এই প্রথম কবির জীবনে অর্থাভাব দূর হয়। পরবর্তী বছরের জন্মদিন আসে। ভারত থেকে কবিকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জোরদার হয় না। তাগাদাও আসে না।

তবে নজরুলকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের উচ্ছ্বাস কিন্তু চলতেই থাকে। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৫ সালের ২২ জুলাই কবিকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাখা হয় ১১৭ নম্বর কেবিনে। ১৯৭৬ সালে কবিকে একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিক না হলে পদক দেওয়া যায় না বলে ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে নাগরিকত্বও দেওয়া হয়। এ সময় তিনি পিজি হাসপাতালে ভর্তি। অবশেষে ৭৭ বছর বয়সে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট সকাল ১০টা ১০ মিনিটে চিকিৎসাধীন কবি পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গানের বুলবুলি চিরমুক্তি পেলেন অনন্ত আকাশে।

জাতীয় কবির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।🙏❤️🌸

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
১৯২৬ সালে চট্টগ্রামে কবির জন্মঃ ২৪ মে (১৮৯৯)
চুরুলিয়া, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)
মৃত্যুঃ ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ (বয়স ৭৭)🤍🖤

সমাধিঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ।
জাতীয়তাঃ ব্রিটিশ ভারতীয় (১৮৯৯-১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৭৬)
বাংলাদেশী (১৯৭৬)
অন্যান্য নাম
দুখু মিয়া
নাগরিকত্ব
ব্রিটিশ ভারতীয় (১৮৯৯–১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭–১৯৭৬)
বাংলাদেশী (১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬–২৯ অগাস্ট ১৯৭৬)

পেশাঃ
কবি, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, সম্পাদক
উল্লেখযোগ্য কর্ম।
চল্‌ চল্‌ চল্‌ বিদ্রোহী নজরুলগীতি অগ্নিবীণা (কাব্যগ্রন্থ) বাঁধন হারা ধূমকেতু বিষের বাঁশি গজল
আন্দোলন
বাংলার নবজাগরণ
দাম্পত্য সঙ্গী
আশালতা সেনগুপ্ত (প্রমিলা)
নার্গিস আসার খানম
সন্তান
কৃষ্ণ মুহাম্মদ
অরিন্দম খালেদ (বুলবুল)
কাজী সব্যসাচী
কাজী অনিরুদ্ধ
পিতা-মাতা
কাজী ফকির আহমদ (পিতা)
জাহেদা খাতুন (মাতা)
পুরস্কার জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯৪৫) স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৭) একুশে পদক (১৯৭৬) পদ্মভূষণ হোন।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।