নিজস্ব প্রতিবেদক ও খুলনা প্রতিনিধি ::
বিভাগীয় শহর খুলনার কেরানী গাজী মোঃ নাসিমুল হক যে এক সময় চায়ের দোকানের বাকি পরিশোধ করতে হিমসিম খেতেন। তিনি এখন গাড়ি হাকিয়ে দিব্বি আয়েসে চলছেন। জানা যায়, তিনি তার একাউন্টে ফেলে রেখেছেন প্রায় দু`শ কোটি টাকারও বেশি। আর গাড়ি, বাড়ি অঢেল সম্পদের মালিক তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ অঞ্চলের সকল উন্নয়ন ও কনসট্রাকশনের ঠিকাদারী কাজ তার দখলে। দখলই শুধু নয় সব কাজ তিনি নিজে করেন কোন রকম টেন্ডার ছাড়াই। টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ছাড়া কি সরাসরি সরকারি উন্নয়ন কাজ করা যায় ? এরকম প্রশ্ন করা হলে গনমাধ্যম কর্মীদেরকে তিনি জানান, জেলা প্রশাসক ও এডিসি রাজস্ব সাহেব তাকে দিয়েই উন্নয়নের কাজ করিয়ে নেন। শুধু এ রকম অনিয়ম আর দুনীর্তিই নয়, একজন কেরানী হয়েও প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে, তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে শত শত কোটি টাকা মালিক বনে গেছেন তিনি। কিন্তু কিভাবে ? কোন আলাউদ্দিনের প্রদীপের ছোঁয়ায় তিনি এত সম্পদ করতে পেরেছেন ? এ বিষয়ে দীর্ঘদিন প্রশ্ন দেখা দিলেও কেউ মুখ খোলেননি। তবে তার দুনীর্তির মাধ্যমে সম্পদ অজর্নের বিষয়টি এলাকাবাসীর মধ্যে কানাঘুষা হলেও কেউ মুখ খুলতে পারে না গাজী মোঃ নাসিমুল হকের নিজস্ব বাহিনীর ভয়ে। তার বাহিনীর হামলা হুমকি ধামকি দিয়েই খ্যান্ত দেন না। দমন নির্যাতনের পাশাপাশি আইন আদালতে মিথ্যা মামলার হয়রানীও করেন। সে ভয় করেন এলাকাবাসী। তিনি রীতি মতো পেটোয়া বাহিনীও পোষেন বলে জানা যায়। যাদের আতঙ্কে গনমাধ্যমকর্মীরাও তথ্য প্রমান থাকা সত্বেও সংবাদ প্রকাশের সাহস পান না।
তিনি বটিয়াঘাটা থানার এসিল্যান্ড অফিসের কেরানী ওরফে বড়বাবু গাজী মোঃ নাছিমুল হক বাড়ি খুলনা জেলার পাইকগাছার গড়াইখালিতে। তার বর্তমান বাড়ি, গল্লামারিতে। এখানকার বেগ মার্কেটের পিছনে ৬ কাঠা জমির উপর নির্মাণ করেছেন ৪ ইউনিটের আলিশান বাড়ি। যার মুল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। এছাড়াও খুলার বটিয়াঘাটার চকরাখালির মল্লিকের মোড়ে রয়েছে বাগান বাড়ি্ যেখানে ১.৫০ বিঘা জায়গার ওপর নির্মান করেছেন এ বাড়ি। যার নির্মাণ ব্যয় আনুমানিক মুল্য ৪ কোটি টাকা। খুলনার বটিয়াঘাটার পুঠিমারিতে ৭ বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করেছেন বাগান বাড়ি ও মাছের খামার । যার আনুমানিক মুল্য ১০ কোটি টাকা। এই মাছের খামারে তিনি পাটনার হিসেবে বেজার চেয়ারম্যান ইউছুফ হারুনের নাম প্রচার করে থাকেন। এছাড়াও দেলুটিতে গড়েছেন গড়াইখালি চিংড়ি প্রোজেক্ট । যে প্রজেক্ট নির্মাণ করেছেন ৯০ বিঘা জমির ওপর। যেখানে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এই সম্পদের মালিক হিসেবেও তিনি প্রচার করেন বেজার চেয়ারম্যানের নাম। এছাড়া নামে বেনামে আরো প্রচুর সম্পদ আছে। যার কোনটি্তই তার নিজের নয় বলে তিনি প্রচার করেন। তবে পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, যে সব আমলা বা সরকারি কর্মকর্তাদের নাম তিনি জড়িয়ে নিজের দুনীর্তির সম্পদ রক্ষা করেন। অন্যকে মালিক বানিয়ে নিজেকে আড়াল করেন তারা হয়তো কেউ জানেন না যে তাদের নামে সম্পদের পাহাড় দেখিয়ে দুনীর্তির কর্মকান্ড আড়াল করেন একজন কেরানী! তবে দুদক এবং তদন্ত সংস্থার অনুসন্ধানী তদন্তে বেরিয়ে আসবে আসল তথ্য বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। আর তার দুনীর্তির বিষয়টিতে আইন শৃংখলা বাহিনী কিংবা তদন্ত সংস্থার আমলে নেবার আগেই তার তথ্য তিনি পেয়ে যান। সে কারণে তদন্ত শুরু করতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার পৃষ্টপোষকতারকারি বাহিনী। প্রয়োজনে হুমকি দিয়ে না হলে বিভিন্ন তদবীর বাজির মাধ্যমে ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার প্রভাবও তিনি তার সম্পদ রক্ষায় খাটান বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও সে কর্মকর্তা এই প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
শত শত কোটি টাকার মালিক গাজী মোঃ নাসিমুল হকের বর্তমান কর্মস্থল খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা থানার এসিল্যান্ড অফিস। সেখানকার কেরানী পদে তিনি কর্মরত। তাকে বড়বাবু পরিচয় দিলেই তিনি বেশি খুশি হন। সরকারি পে স্কেল অনুযায়ী কেরানীর বেতন হবার কথা সর্ব সাকুল্যে ১০ হাজার টাকার বেশি নয়। এই বেতনে সংসার চালাতে হিমসিম খাবার কথা সেখানে বাড়ি , গাড়ি, মাছের খামার ব্যাংক ব্যালেন্সসহ কোটি কোটি টাকা মালিক কি করে তিনি বনে গেলেন ? কোন আলাউদ্দিনের চেরাগের ছোঁয়ায় তিনি শত শত কোটি টাকার সমপেদ গড়তে পেয়েছেন তিনি ? এ প্রশ্ন এখন টক অব দি টাউন। আর তিনি বিষয়টি জানার কারণে বিভিন্ন জায়গা ধর্না দিতে শুরু করেছেন যাতে তার বিরুদ্ধে কোন রকম তদন্ত না হয়। তদন্ত ধামাচাপা দেবার তদবীর শুরু করেছেন।
আর সে কারণেই সম্ভবত দুদকের নজরে আসা তার অঢেল সম্পদের তথ্য অনুসন্ধান লালফিতায় আটকে যেতে পারে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষকমহল। তার সম্পদের বিষয়ে দুদক অনুসন্ধানে নেমেছে বলেও একটি অসমর্থিত সুত্রে জানার পর তদন্ত থামাতে তিনি তদবীর আর ধন্না ধরতে শুরু করেছেন । দুদকঙিদি অনুসন্ধানী তদন্ত করে তবেৎ বেড়িয়ে আসবে আসল তথ্য আর বেড়িয়ে আসবে আসল থলের বেড়াল। এ ব্যাপারে তিনি দুদকের তদন্ত বিষয়টি ধামাচাপা দেবার জোর চেষ্টা করছেন বলে জানাগেছে। তিনি দাবী করেছেন তিনি সৎ পথে ব্যবসা করেছেন। সেই ব্যবসা থেকে নিজের কষ্টে গড়েছেন সম্পদ। তবে কেমন করে একজন ক্লার্ক বা কেরানী শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে উঠলেন ? সে প্রশ্ন থেকেই গেছে। তার দুনীর্তির আরো তথ্য উঠে এসেছে দৈনিক মুক্ত বাংলার তদন্তে।
( চলব )