নিজস্ব প্রতিবেদক ::
দীর্ঘ ১২ বছর ধরে নিজের টাকা খরচ করে কাঁচা সড়ক মেরামতের কাজ করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিনোদপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামের দিনমজুর আমির হোসেন। শুধু সড়ক মেরামতই নয়, সরকারি সড়কের দুই পাশে প্রায় ৫ শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়েছিলেন আমির। এসব গাছ লাগানোর পাশাপাশি নিয়মিত পানি দেয়াসহ পরিচর্যার কাজও করেন তিনি।
সড়ক সংস্কার ও গাছ লাগানোই বিশ্বনাথপুর গ্রামের দিনমজুর আমির হোসেনের নেশা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাটি ফেলে সড়কের গর্ত ভরাট করছেন শ্রমিকরা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সরকারি কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাঁচা সড়কে মাটি ভরাট ও মেরামতের কাজ চলছে। কিন্তু তা নয়, একজন দিনমজুরের ঋণের টাকায় পারিশ্রমি নিয়ে কাজ করছেন অন্য দিনমজুররা। এমনকি সেই দিনমজুর আমির হোসেন নিজেও তাদের সঙ্গে সড়ক মেরামতের কাজ করছেন।
জানা যায়, নিজের টাকা ব্যয় করে সীমান্তের জিরো লাইন ঘেঁষা সড়কগুলোতে নিজেই গাছ লাগিয়েছেন আমির। কাঁচা সড়কের গর্ত বা খানাখন্দ দেখলেই সেটি মেরামত ও ফাঁকা সড়কের দুপাশে গাছ লাগানো তার নেশা।
স্থানীয়দের দাবি, আমির হোসেন কাঁচা সড়ক মেরামত করায় খুব সহজেই মাঠ থেকে বিভিন্ন ফসল তুলে আনতে সুবিধা হয় তাদের। নিজের দৈনিক আয় ছাড়াও আমির হোসেন কয়েক দফায় বিভিন্ন এনজিও ও ব্যক্তির কাছে দেড় লাখ টাকা ঋণ করে সড়ক মেরামত ও গাছ লাগানোর কাজ করেছেন। এমনকি বর্তমানেও তার ১০ হাজার টাকা ঋণ আছে একটি এনজিওতে।
পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ, নিজের সংসার বা পরিবার নিয়ে তেমন চিন্তা নেই আমির হোসেনের। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা হলেও দিনের একবেলা কাজ করে দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত করেন কাঁচা সড়ক মেরামতের কাজ।
আমির হোসেনের স্ত্রী মোসা. সুখী বেগম বলেন, ‘সংসার নিয়ে আমার স্বামীর কোনো চিন্তা নাই। টিনের একটি ঘরে তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে বসবাস করি। তবুও ঘর তৈরির কোনো পরিকল্পনা বা ইচ্ছে নেই তার। সকালে বের হয়ে বাসায় ফিরে গভীর রাতে। একবেলা নিজে শ্রমিকের কাজ করে বাকি সময় রাস্তা মেরামত করে বেড়ায়। তাকে বারবার বলেও কোন লাভ হয়নি। কারও কথা শুনে না। নিজের ইচ্ছেমতো রাস্তা মেরামতের কাজেই নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতিবেশী আব্দুল কাদির বলেন, ‘সে নিজে একজন দিনমজুর হয়েও সেই উপার্জন থেকে শ্রমিক দিয়ে রাস্তা মেরামত করে। এমনকি সীমান্তের বিভিন্ন সড়কে গাছ লাগায় আমির হোসেন। সড়ক মেরামত ও গাছ লাগানো বা পরিচর্যা করা তার নিয়মিত কাজ। এমনকি এলাকায় কেউ মারা গেলে বিনা পারিশ্রমিকে কবর খননের কাজ করে সে।’
কৃষক মো. কালাম বলেন, ‘সীমান্ত-ঘেঁষা ফসলি মাঠে ধান, ভুট্টা ও গমসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হয়। আর এদিকে মাটির রাস্তা হওয়ায় অনেক খানাখন্দে ভরা থাকে। এতে মাঠ থেকে ফসল তুলতে কষ্ট ও ভোগান্তি পোহাতে হয় কৃষকদের। এসব মাটির রাস্তা মেরামত করায় কৃষকদের ফসল ঘরে তুলে আনা অনেক সহজ হয়। আমির হোসেন আমাদের গ্রামের জন্য আশীর্বাদ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমির হোসেনের বাল্যকালের বন্ধু ফজর আলী ও তার ভাইয়েরা সবাই তার মতো দিনমজুরের কাজ করে জমি কিনেছে, বাড়ি করেছে। কিন্তু আমির কিছুই করতে পারেনি। নিজের সংসার থেকে টাকা এনে রাস্তায় খরচ করছে। এমনকি ঋণ করে শ্রমিক দিয়ে মাটি ভরাট ও গাছ লাগানোর কাজ করে সে। তাকে অনেক নিষেধ করলেও শোনে না।’
শুধুমাত্র দেশপ্রেম, ভালোলাগা ও মানসিক প্রশান্তির কারণেই এসব কাজ করেন বলে দাবি আমির হোসেনের। তবে এসব কাজের বিনিময়ে কারও থেকে কিছুই চান না বলে জানান তিনি। তার ইচ্ছে আজীবন এভাবেই সড়ক মেরামত ও গাছ লাগানোর।
আমির হোসেন বলেন, ‘ভাঙা ও গর্ত রাস্তা মেরামতের যে অনুভূতি, তা মানুষ জানতে পারলে আমি এক কোদালও মাটি ফেলতে পেতাম না। আল্লাহর কাছে এসব কাজের প্রতিদান চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার গ্রামের আশপাশে যত মাটির রাস্তা আছে, সব মেরামত করার চেষ্টা করছি। আগামীতেও এ কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই। কিছু ঋণ আছে এখনও। সেই ঋণ শোধ করে আবারও ঋণ করে কাজ চলমান রাখতে চাই। ভবিষ্যতে কখনও নির্বাচনে অংশ নেয়া বা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার ইচ্ছে নেই আমার।’
স্থানীয়দের কাছ থেকে সহানুভূতি, ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেলেও তার এসব কাজে খুব একটা সন্তুষ্ট নয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তবে তার কাজে উৎসাহ দিতে সহযোগিতার আশ্বাস স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাহার আলী প্রামাণিক বলেন, ‘নিঃসন্দেহে কাজটি অনেক প্রশংসার। আমরা তাকে উৎসাহ দিতে সহযোগিতা করে এমন ভালো কাজের সঙ্গে থাকতে চাই।’
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।