জয় আহমেদ ::
প্রতিবছর ‘বিশ্ব উদ্ভাবন সূচক’ প্রকাশ করে জাতিসংঘের এই প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালে ১৩২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৫তম হয়েছে।
পাকিস্তানের চেয়েও পিছিয়ে বাংলাদেশ
প্রতিবছর ‘বিশ্ব উদ্ভাবন সূচক’ প্রকাশ করে জাতিসংঘের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থা (ডাব্লিউআইপিও)। বিশ্ব র্যাংকিং এ বাংলাদেশ ২০১৪ সালে বিশ্বের ১৪৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২৯তম।
২০১৮ সালে ১২৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৬তম। তখনো সব দেশের চেয়ে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালে যথাক্রমে ১২৯, ১৩১ ও ১৩২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ১১৬তম। এই তিন বছর শুধু নেপাল ও মিয়ানমারের চেয়ে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ২০২২ সালে ১৩২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ১০২তম। তখনো বাংলাদেশের পেছনে ছিল নেপাল ও মিয়ানমার।
তবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২৯তম। সেখানে আট বছরে উদ্ভাবনীতে ২৪ ধাপ এগিয়েছে। ২০১৫ সালে ১৪১টি দেশ নিয়ে র্যাংকিং করা হয়েছিল; কিন্তু ২০২৩ সালে ১৩২টি দেশ নিয়ে র্যাংকিং করা হয়।
নতুন কিছু উদ্ভাবনে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক দুটি বিষয়ের অভাবের কথা বলছেন। প্রথমটি দেশের শিক্ষার্থীদের ছোট থেকে নতুন কিছু উদ্ভাবনে আগ্রহী করে না তোলা। আরেকটি হলো শিল্প-কারখানার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগ সৃষ্টি না করা।
আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘উদ্ভাবনী বা সৃজনশীলতা নির্ভর করে একজন শিক্ষার্থীকে কিভাবে সৃজনশীলতার দিকে নিয়ে যায়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিয়ে গেছি। এমনকি সৃজনশীল পদ্ধতিও দেখেছি। কিন্তু সেগুলো আমাদের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারেনি। এটা আমাদের উপলব্ধি। আধুনিক ও উন্নত দেশের শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের চেয়ে ওপরে অবস্থান করছে। কারণ তাদের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে সেটা দেখি। তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মুখস্থ করে জিপিএ ৫ পাওয়াটা গুরুত্ব পায়নি। পরীক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্ব কম; কিন্তু শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ, প্রকল্পের কাজের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটাই এখন আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন করে চিন্তা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের দেশের সফটওয়্যারের দিকে ইনোভেশনটা ভালো। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই ব্যবস্থা এখন হয়েছে। এখানে আমাদের শিল্প-কারখানার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোর্সের যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে।’
নতুন কোনো কিছু উদ্ভাবন বা আবিষ্কার করলে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। এতে মেধাস্বত্ব রক্ষিত হয়।
এই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের পরিচালক আলেয়া খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস উদযাপন করছি। কিন্তু আজ অনুষ্ঠান করছি না। এটা পরে করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘একটি পণ্যের পেটেন্ট করতে দীর্ঘ সময় লাগে। আইনে আছে তিন বছর লাগে। আবেদন করা হচ্ছে। তবে আমাদের প্রচারণা চালাতে হবে অনেক বেশি। অনেকে এই বিষয়ে সচেতন কম। যারা এসব কাজে জড়িত তারা আসছে।’
প্রতিবছর ২৬ এপ্রিল এই দিবস পালন করা হয়। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থা এই দিবসটি পালন করেছিল। মানুষের মেধাসম্পদের কৃতিস্বত্ব (পেটেন্ট), কপিরাইট, বাণিজ্যিক মার্কা (ট্রেডমার্ক) এবং ঐতিহাসিক ডিজাইনের বিষয়ে মানুষকে সজাগ করাই এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য।