‘সুখহীন নিশিদিন,পরাধীন হয়ে….’ – দৈনিক মুক্ত বাংলা
ঢাকাসোমবার , ১ এপ্রিল ২০২৪
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি-ব্যবসা
  3. আইন ও আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আরও
  6. ইসলাম ও ধর্ম
  7. কোভিট-১৯
  8. ক্যারিয়ার
  9. খেলা
  10. জেলার খবর
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. বিনোদন
  13. মি‌ডিয়া
  14. মু‌ক্তিযুদ্ধ
  15. যোগা‌যোগ

‘সুখহীন নিশিদিন,পরাধীন হয়ে….’

বার্তা কক্ষ
এপ্রিল ১, ২০২৪ ১:৪১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রিয়ানা হো‌সেন ::

সুখ। ছোট একটি শব্দ। কিন্তু মানব জীবনে সবচাইতে লালিত একটি বাসনা। বহু প্রাচীন একটি অনুভূতি। বস্তুগত সম্পদ চাপিয়ে এর ব্যাপ্তি কখনো মনের গহীনে, কখনো উজ্জ্বল আবেগে আলোকিত।

মানুষ জীবনভর এর পিছনে ছুটে। ফকির থেকে আমির। পন্ডিত থেকে সাধারন। সবাই ছুটছেনত ছুটছেনই।

দিনের শেষে এর দেখা কী মিলে কখনো? মিলে গেলে এর স্থায়ীত্বইবা কতটুকু?

অনেকেইতো বলেন আমি সুখী। তাহলে তার এই সুখের সংঙ্গা কী? নিজেকে সুখী দাবী করে তিনি কী কিছুই গোপন করেননি? যে মুহুর্তে তিনি বললেন সুখী এর কয়েক মুহুর্ত পরেই যদি ডাক্তার বলে দেন, আপনি জটিল এক রোগে আক্রান্ত, তাহলে নিমিষেই উবে যায় সেই সুখ।

যদি ধরে নেয়া হয় তার সব ঠিক আছে তাহলেও কী তিনি সুখী? বাবা মাকে হারিয়ে ড্রেনের পাশে শুয়ে থাকা প্যালেস্টাইনের কোন গৃহহীন শিশুর কথা মনে হলে কী সেই সুখ অবশিষ্ট থাকে? কিংবা ‘আব্বু আমাকে বাচাও’ বেইলি রোডে আগুনে পুড়ে যাওয়ার আগে কোন এক কন্যার এই আর্তির কথা মনে হলে? অথবা সংসারের খরচ জোগাতে রিক্সার প্যাডেলে পা রাখা ৭০ বছরের বৃদ্ধের জীবন সংগ্রামে চোখ পড়লে?

অপরাধ বোধ নিয়ে কী সুখী হওয়া যায়? নিজে আপাতত ভাল থাকার নামতো সুখ হতে পারে না। পারে কী?

রাজা চার্লস ক্যান্সার আক্রান্ত! একই রোগে ভূগছেন পুত্র বধূ কেট মিডলটন! বিচ্ছেদের পর স্ত্রী ডায়না দুই নাবালক সন্তান রেখেই জীবন হারিয়েছেন রাজপথে! পুত্র প্রিন্স হ্যারি চলে গেছেন দূর দেশে! বড় পুত্র তথা ভবিষ্যৎ রাজা উইলিয়ামও ব্যস্ত অসুস্থ স্ত্রী নিয়ে! কাঁধে অল্প বয়সী ৩ সন্তান। এই বিপদেও পাশে নেই আপন ভাই! প্রাসাদ জুড়ে কি বিপুল বিষন্নতা!

জৌলুসের আড়ালে প্রয়াত রাণী এলিজাবেথের দূঃখের কাহিনী আমরা জেনেছি নেটফ্লিক্সের ‘ক্রাউন’ সিরিজে!

কোথাও বিত্ত অথবা খ্যাতিরতো কোন অভাব নেই!

সাধারন থেকে অসাধারন। সুখের কী কোন অস্তিত্ব নেই পৃথিবীতে? সুখ নামক এই বিমূর্ত ধারনাটি কী কেবলই মানুষের কল্পনা? মরিচিকা?

৪ বছরের পুত্রের দাফনের অর্থ ছিলনা নজরুলের! লাশ ঘরে রেখেই সেই অর্থের জন্য লিখতে হয়েছিল ‘ঘুমিয়ে গেছে আমার গানের বুলবুলি’ আর দাফন শেষে চোখের অশ্রু দিয়ে লিখেছিলেন ‘পৃথিবীর সবচাইতে ভারী জিনিস হচ্ছে পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ’! মানুষের বিস্ময়ভরা জীবন দেখে চির নির্বাক হবার আগে গেয়েছেন অমর গান- ‘খেলিছ এ বিশ্বলয়ে বিরাট শিশু আনমনে….’।

‘সব কিছু এখানে আছে, কিছু নেই আমার কাছে’- ইউটিউবে জগজিৎ এর এই গানে লক্ষ লক্ষ মানুষের লাইক আর শেয়ার! ‘সাগরের গভীরতা আমার ব্যাথার কাছে হার মেনে যায়’- হেমন্তের কন্ঠে এই বিলাপত আরো করুন!

‘সুখহীন নিশিদিন, পরাধীন হয়ে….’ গানে কেন রবীন্দ্রনাথ প্রতিনিয়ত ‘দীনপ্রাণে’ মানুষের ঘুরে বেড়ানো দেখতে পান? প্রতিনিয়ত ভীত পীড়িত আর নানা অপমানে মানুষের শির নত থাকাটাও তার চোখ এড়িয়ে যায় না কেন?

তিনি কী মানুষের মুখে সবসময় কান্না দেখতে পেতেন? কিংবা গোপনে নিজেই কাঁদতেন? আরেক গানে তিনিইতো গেয়েছেন –

‘প্রতিদিন যদি কাঁদিবি,
কেবল একদিন নয় হাসিবি তোরা-
একদিন নয় বিষাদ ভুলিয়া,
সকলে মিলিয়া গাহিব মোরা’…!

বাল্য বিবাহ দেবার অপরাধ আর অপমানবোধ, পণের টাকার জন্য জামাতার নিত্য চাপাচাপি আর সবশেষে আদরের কন্যা বেলার যক্ষা রোগ রবীন্দ্রনাথকে বুনো শুয়রের মতো খুবলে খেয়েছে। রবীন্দ্র জীবনীকারদের মতে এই কষ্ট থেকেই তার কলম দিয়ে বের হয়েছিল কালজয়ী দুটি সেরা গল্প ‘হৈমন্তি’ আর ‘দেনা পাওনা’!

দীর্ঘ যন্ত্রণা শেষে বেলার মৃত্যু সংবাদ শুনে তিনি লিখেন –

‘এই করেছ ভাল, নিঠুর, এই করেছ ভাল
এমনি করে হৃদয়ে মোর তীব্র দহন জ্বালো’

আহারে অসহায় পিতা!

শুধু কী বেলা! জীবনভর দূঃখের সাথে তার বসবাসের কাহিনী জানা যায় তার জীবনী থেকে!

জীবনে কতবার যে মুক্তির জন্য হাহাকার করেছেন। ‘কোথা আছ প্রভু’ গানে গেয়েছেন-

‘সারা কী দিবে না, দীনে কী চাবেনা
রাখিবে ফেলিয়ে অকূল আঁধারে ….’

চাপ নিতে পারেননি নোবেল বিজয়ী আমেরিকান সাহিত্যক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, বিশ্ববিখ্যাত ডাচ চিত্র শিল্পী ভ্যান গফ। দুজনেই মাথায় গুলি চালিয়ে জীবন থেকে ছুটি নিয়েছেন। জীবনের অর্থ খুঁজে না পেয়ে অঢেল সম্পদের মালিক War and Peace এর লেখক, রাশিয়ান দার্শনিক তলস্তয় বহুবার তাদের অনুসরন করতে গিয়ে ফেরত গেছেন! অনেকটা কবি জীবনান্দের মতোই তার মৃতদেহ পাওয়া যায় একটি রেল স্টশনে! বিখ্যাত উপন্যাস Crime and Punishment এর লেখক, আরেক রাশিয়ান সাহিত্যিক দস্তইয়েফস্কিও ছিলেন একই পথের পথিক। জেলদন্ড, দেউলিয়া এবং সবশেষে বিষন্নতা রোগ!

তারা কী সুখের জন্য আত্মহত্যা করেছিলেন অথবা হতাশ ছিলেন কিছু না পেয়ে! এই প্রশ্নেরওতো নিশ্চিত উত্তর নেই! তাহলে অন্য কী ছিল তাদের চাওয়া, যা তারা পাননি?

আম্বানী হাজার কোটি রুপি খরচে অসুস্থ পুত্রের বিয়ে দিয়ে কোন সুখ খোঁজেন? ৫০ লাখ টাকায় কুরবানীর গরু, ২০ লাখ টাকায় ঈদের শাড়ি কিংবা অজ পাড়াগায়ে রঙ্গীন শূন্য প্রাসাদ অথবা ট্রাকে করে মেয়ের বাড়িতে পাঠানো ইফতার- সবইতো একই সুতায় বাধা!

যার যার আবস্থান থেকে শুধু ‘আমারে দেখ, ঐ আমারে দেখ’ – সুখের তীব্র আর্তনাদ।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজা-বাদশাদের সোনার টয়লেটে মল-মূত্র ত্যাগইবা কেন বাদ পড়বে? সবইত সুখ প্রদর্শনের উন্মুক্ত বাণিজ্য মেলা!

চারিদিকে শুধু Wow! আর Wow!

‘আয়না বসাইয়া দে মোর কলবের ভিতর’ এই আয়না দিয়ে মানুষ আসলে কী দেখতে চায়? একই মানুষ পারফিউমের ঠিক উপরে রাখা ড্রেসিং টেবিলের আয়নাকে এতো ভয় পায় কেন?

দানের দিক থেকে সবচাইতে উদার আমেরিকান বিলয়নিয়ার ওয়ারেন বাফেট ২০ বছরের পুরানো গাড়ীতে অফিসে যান, তার কোন ড্রাইভার নেই। প্রাসাদ না বানিয়ে থাকেন ৫ বেডরুমের সাধারন বাড়িতে। ক্ষুদ্র আম্বানীর বিয়েতে মেহমান হয়ে আসা বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গের বিলিয়ন ডলারের সম্পদও উৎসর্গ করা।

তারা কী ক্লান্ত অথবা তারা কী জেনে গেছেন নগ্ন মেলার পণ্য হয়ে সুখ নেই? সক্রেটিস বলতেন ‘নিজেকে জান’ (Know thyself)। তারা নিজেকে জেনেছেন বলেই কী তাদের পুত্র কন্যার বিয়ে কিংবা খৎনাতে আর তারার মেলা বসে না?

দালাই লামার মতে ‘সুখ আগে থেকে প্রস্তুত হয়ে থাকা কিছু নয়, ব্যক্তির ক্রিয়া থেকেই এর উৎপত্তি’।

রবীন্দ্রনাথ কী তার সুখহীন গানের শেষ লাইনগুলোতে এই ক্রিয়ার কথাই বলে গেছেন?

‘তোল আনত শির,
ত্যজো রে ভয়ভার,
সতত সরলচিতে চাহো তারি প্রেমমুখপানে’।

ইচ্ছা অনিচ্ছায় মানুষের এতো যে অসহায়ত্ব, এতো যে সুখহীনতা, এতো যে পরাধীনতা তিনি এটাকে চ্যালেন্জ করতে বলেছেন প্রেম দিয়ে- শির উঁচু করে, সব ভয়কে তুচ্ছ করে, সরল চিত্তে!

সব কিছুর পরও দুনিয়াতে, প্রকৃতিতে তিনি প্রেম ভালবাসাই খুঁজে পেয়েছেন, আশার আলো দেখেছেন। ‘আলোক সাগরে’ ভাসতে চেয়েছেন! এতেই তিনি সুখ নয়, মূলত মুক্তি দেখে মানুষের মাঝে বাঁচতে চেয়েছেন।

লিখেছেন- ‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভূবনে’!

সংযমের মাস প্রায় শেষ। কিছুদিন পরই চাঁদ রাত। ঐরাতে মুসলমানদের ঘরে ঘরে বাজবে নজরুলের বিখ্যাত গান –

‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ,
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে- শোন আসমানী তাগিদ’

আমরা কী পারবো সকল অশ্লীলতা ‘ঢেলে না দিয়ে’, রবীন্দ্রনাথের ‘প্রেমমুখ’ নিয়ে নজরুলের মতো নিজেকে ‘বিলিয়ে দিতে’?

মুক্তির লক্ষ্যে, মানুষের জন্য।

সবাইকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা!

লন্ডন
৩১.০৩.২০২৪

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।