আছাদুর রহমান, কুষ্টিয়া ::
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কুষ্টিয়ার মিরপুর রেলওয়ে স্টেশনে উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি বাংলাদেশের বয়স ৫১ বছর পার হলেও। কিছুদিন আগে মিরপুর উপজেলা নাগরিক কমিঠি এলাকাবাসির নিকট থেকে চাঁদা উটায়ে ষ্টেশনের বিশ্রামাগের সংস্কারের ব্যাবস্হা করে চেয়ার টেবিল কিনে বসার ব্যাবস্হা করে।এছাড়াও নাগরিক কমিটি বিশুদ্ধ পানির ব্যাবস্হা করে দেন। স্টেশন মাষ্টার এক যুগের বেশি সময় ধরে স্টেশনের উন্নয়নের জন্য চিঠি দিলেও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এর কোন উত্তর মেলেনি। বিপুল সংখ্যক যাত্রী প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করলেও স্টেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ট্রেন যেন থেমে আছে একই প্ল্যাটফর্মে।
স্থানীয় মিরপুর রেলওয়ে স্টেশনে কর্তব্যরত স্টেশন মাষ্টার সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১২ নভেম্বর মিরপুর রেলওয়ে স্টেশনের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের চুয়াডাঙ্গা এসএসএই কার্যালয়কে চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় স্টেশন মাস্টার অফিসের পার্টিশন দেয়াল নির্মাণ, স্টেশন মাস্টার অফিস সংলগ্ন টয়লেট নির্মাণ ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা, বিশ্রামাগার সংস্কার ও বর্ধিতকরণ,প্লাটফরমে সেড নির্মাণ, প্ল্যাটফর্ম কার্পেটিং, প্লাটফর্মে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, প্ল্যাটফর্ম বর্ধিতকরণ, স্টেশনে প্রবেশের রাস্তাটি ও প্লাটফর্ম মেরামত এবং রোডের যানবাহন প্লাটফর্মে ওঠা বন্ধের প্রয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ। এরপর ধারাবাহিকভাবে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর একই ভাবে এই চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে আজ অব্দি এই চিঠির উত্তর মেলেনি।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়-পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর সদর উপজেলা, গাংনী, মুজিবনগর, কুষ্টিয়া সদর, দৌলতপুর
উপজেলার বিশাল এলাকার জনসংযোগ স্থল এবং মিরপুর উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই অবহেলিত মিরপুর রেলওয়ে স্টেশনটি বিভিন্ন সমস্যায় জরাজীর্ণ। ২০১১ সালের ১০জানুয়ারি হতে মিরপর স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রা বিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে বিপুল পরিমাণ যাত্রী ট্রেনে চলাচল করে। অথচ আলাদা বুকিং অফিস না থাকায় স্টেশন মাস্টার অফিসের ভিতরেই টিকেট বিক্রয় করতে হয়। যা সুষ্টু ক্যাশ সংরক্ষণের পক্ষে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একটি রুম বর্ধিত করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও প্রত্যেক স্টেশনে স্টেশন মাষ্টার অফিস সংলগ্ন টয়লেট থাকলেও মিরপুর স্টেশনে কোন ব্যবস্থা নেই।
এ ছাড়াও উল্লেখ করা হয়, মিরপুর স্টেশনে আন্তনগর ট্রেনে বিরতী প্রদান করায় বিপুল পরিমাণ যাত্রী ট্রেনে চলাচল করে। কিন্তু প্ল্যাটফরমে শেড এবং কার্পেটিং না থাকার কারণে যাত্রীরা রোদ এবং বৃষ্টিতে চরম দূর্ভোগের শিকার হয়। যাত্রীদের দূর্ভোগ লাঘবের জন্য প্ল্যাটফরমে কার্পেটিং শেড নির্মাণ এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠুভাবে টিকেট সংগ্রহের স্বার্থে প্ল্যাটফরমে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের প্রয়োজন। মিরপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফরম অত্যন্ত ছোট উল্লেখ করে বলা হয়, আন্তঃনগর ট্রেনে ৯/১৮ বগিসহ প্ল্যাটফরমে সংকুলান হয় না। বর্তমানে ১২/২৪ কোচসহ ট্রেনের ৫/১০ কোচ প্লাফর্মের বাহিরে থাকে। ট্রেনে ওঠানামার সময় যাত্রীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। প্ল্যাটফরম বর্ধিত করে এ সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। স্টেশনে প্রবেশের একটি মাত্র রাস্তা। রাস্তাটির কার্পেটিং ভেঙে গিয়েছে। যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ ঝুঁকিপুর্ন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় মিরপুর নাগরিক কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জোয়ার্দ্দার বলেন, বিগত এক যুগ ধরে মিরপুর রেল স্টেশনের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু আজঅব্দি এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা মিরপুরের উন্নয়ন বঞ্চিত রেলওয়ে স্টেশনটি আধুনিকায়নের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন রত ইন্দ্র জিত বলেন, দেশের অনেক স্টেশনের উন্নয়ন হলেও মিরপুর স্টেশন দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত। এই স্টেশনের আধুনিকায়ন জরুরী। সেই সাথে সেবার মান বাড়ানো প্রয়োজন।
চুয়াডাঙ্গা থেকে আগত ট্রেন যাত্রী শহিদুল ইসলাম বলেন, মিরপুর স্টেশনে যাত্রীদের দাঁড়ানোর জন্য শেড না থাকায় বৃষ্টির ফলে প্ল্যাটফরমে কাদাপানি জমে যায় ও যাত্রীদের ভিজে ট্রেনে উঠতে হয়। এসব সমস্যার সমাধান হাওয়া প্রয়োজন।
স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা আশরাফুল আলম হীরা বলেন, উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মিরপুর রেলওয়ে স্টেশনটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। আমার জন্ম লগ্ন থেকে এই স্টেশনের কোন উন্নয়ন হতে দেখিনি। একই সঙ্গে যাত্রী সেবার মানও খুবই নিম্নমুখী।
তিনি আরও বলেন, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শেড না থাকায়
বৃষ্টি হলেই ট্রেন থেকে নেমে যাত্রীদের অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়। এছাড়াও অপরিচ্ছন্ন টয়লেট, যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য কোন সুব্যবস্থা নেই।
স্থানিয় মিরপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. জমির উদ্দিন বলেন, মিরপুর রেলওয়ে স্টেশনের উন্নয়নের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট বার বার চিঠি দিলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, মিরপুরসহ ৫টি উপজেলা যাত্রীরা এই স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। তাছাড়াও চিকিৎসার জন্য ঢাকা এবং রাজশাহী নিয়মিত মানুষের যেতে হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হয় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে মিরপুর রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার মীর ইসরাইল হোসেন বলেন, ২০১০ সাল থেকে একটানা ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর বিভিন্ন সমস্যা তুলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে আজ পর্যন্ত এসব সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই চলতি বছর আর এ বিষয়ে কোন চিঠি দেয়া হয়নি।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
