গ্রামীণ ভূমিহীন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্য ফেরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় ১৯৭৬ সালে পথচলা শুরু গ্রামীণ ব্যাংকের। পরবর্তীকালে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ- ১৯৮৩ এর আওতায় প্রতিষ্ঠিত হয় গ্রামীণ ব্যাংক। শুরুতে সরকার ও গ্রামীণ ব্যাংক সদস্যদের মূলধনের পরিমাণ ৬০ এবং ৪০ শতাংশ হলেও তিন বছর পর সদস্যের মূলধনের অনুপাত দাঁড়ায় ৭৫ শতাংশে আর সরকারের অনুপাত হয় ২৫ শতাংশ। সরকার ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থায়নে শুরু হওয়া গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি পরিচিতি পায় বিশ্বব্যাপী। ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষে বাংলাদেশ ও নরওয়ে সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়। সেই চুক্তির বলে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ ও অনুদান পায় গ্রামীণ ব্যাক। সেই টাকা দিয়েই ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সোস্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড বা এসএএফ। সিদ্ধান্ত হয় এই ফান্ডের টাকা গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের কল্যাণে ব্যয় করার। গ্রামীণ ব্যাংক এবং এসএএফ ফান্ডের টাকা দিয়েই যাত্রা শুরু হয় গ্রামীণ কল্যাণের। উদ্দেশ্য ব্যাংকের সদস্য ও কর্মীদের কল্যাণ।
গ্রামীণ টেলিকমের যাত্রাটাও ঠিক একই রকম। গ্রামীণ ব্যাংকের ৪১তম বোর্ডসভায় গ্রামীণ টেলিকম নামে আলাদা একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদকে অবহিত করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় গ্রামীণ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ নেয়ার। এমনকি অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রেও জামিনদার করা হয় গ্রামীণ ব্যাংককে। গ্রামীণ ব্যাংকের পরোক্ষ আর্থিক সহায়তায় ভূমিষ্ঠ হয় আরেকটি প্রতিষ্ঠান গ্রমীণ টেলিকম।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ ফান্ড গড়ে তোলেন। গ্রামীণ ব্যাংককের টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করেন তিনি। এভাবে গড়ে ওঠে আর প্রায় ৫০টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলছেন, জণগণের টাকায় গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের মতো ব্যবহার করেছেন অধ্যাপক ইউনূস।
তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলছেন,
ড. মুহাম্মদ ইউনূস কখনো নিজের জন্য নয়, ভেবেছেন সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা। তিনি ৫৩টি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। সবগুলোর অবৈতনিক চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। কেন? তাদেরকে পথ দেখানোর জন্য। শুধু সামাজিক ব্যবসাকে উন্নয়ন করার জন্য এই জিনিসগুলো করা হয়েছে।
সম্প্রতি এক ব্রিফিংয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. এ কে এম সাইফুল মজিদ জানান, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ ফান্ডসহ ৭ প্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা সরিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাই ৭ প্রতিষ্ঠান ইউনূসের নয়, এর মালিকানা গ্রামীণ ব্যাংকের। জবরদখল নয়, দখলমুক্ত করা হয়েছে।